• বুধবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৫

গত ১৫ বছর শেখ পরিবার রক্ষায় সাংবাদিকতা চলেছে:তথ্য উপদেষ্টা


প্রকাশিত: ১১:৩৮ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬ বার

সাংবাদিকরা এই পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজ করেছে সংবাদপত্রে। ‘তাদের’ মধ্যে অনুশোচনা-অনুকম্পা-অপরাধবোধ একদম নেই।

 

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যতটা সাংবাদিকতা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে শেখ পরিবারকে রক্ষা করার কাজ হয়েছে। সাংবাদিকরা এই পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজ করেছে সংবাদপত্রে। ‘তাদের’ মধ্যে অনুশোচনা-অনুকম্পা-অপরাধবোধ একদম নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে আসলে শুধু প্রতিষ্ঠান বা মালিকানা পরিবর্তন হলে কিছু হবে না। ফ্যাসিবাদ চলে গেছে। তবে এখনও যে সেই চরিত্র সমাজে নেই, তা নয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

উপদেষ্টা বলেন, একটা দলের হয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা মনে করেছেন, তাদের বিপক্ষে আছে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, পাকিস্তান; তারা আছেন সত্যের পক্ষে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, কেউ কেউ হয়তো মনে করছেন, এ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করা হবে না। কিন্তু আমরা কাজ করব। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া দেখেছি। সেটি নিয়ে কাজ চলছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য নৈতিকতা আইনও করা দরকার।

তিনি বলেন, ‘এক সাংবাদিক সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভি তাদের সংবাদ বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে। এখন মানুষ ভাববে, এটা সরকার করেছে। মন্ত্রিত্বের দুই মাসে কাউকে কল দেইনি।’

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বৃত্তপনা রয়েছে সংবাদমাধ্যমের পেছনে। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্থা করার জন্য একের পর এক রিপোর্ট ছাপা শুরু হয়ে যায়। দুর্বৃত্তায়নকে দুর্বৃত্তায়নই বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে রেহমান সোবহানের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স হয়েছিল, বিশাল ভলিউমের রিপোর্ট হলো কেউ তা পড়ে দেখল না। এবার যেমন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে শ্বেতপত্র হলো কেউ পড়ে দেখল না বলে আফসোস করছে লোকজন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টটাও কতজন পড়ে দেখেছেন আমার সন্দেহ হয়।’

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি থেকে অনেকে সেলফ সেন্সর করে সাংবাদিকতা করেছে। আরেকটি হচ্ছে, কিছু পাওয়ার সংস্কৃতি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে রিপোর্টাররা তেমন জায়গা পেত না। সম্পাদকরা সেখানে গিয়ে তোষামোদ করতেন।’ তিনি বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো চলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে। ওগুলো দেয়ালে পাওয়া যায় কিন্তু পাঠকের ঘরে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন তার ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গবেষণাকাজ নিয়ে আলাপকালে বলেন, চিত্রনায়িকা পরী মনিকে গ্রেপ্তার করার সময় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য তাকে আদালতে নিয়ে যায়। সঙ্গে একদল ক্যামেরাম্যান ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় গণমাধ্যমের লোকজনকে ডেকে নিয়ে দেখানো হলো কোথায় কোথায় মদ রাখা হতো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ১৯টি লাশ পড়ে গেল, অথচ এ সফরের প্রতিবাদ জানানো মাওলানা মামুনুল হককে ব্যক্তিগত বিষয় দিয়ে ঘায়েল করা হলো। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় প্রথমদিন এমনকি পরেরদিনও বলা হচ্ছিল, একটি স্বনামধন্য করপোরেশনের মালিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রেও দেখা গেল, মুনিয়া এবং তার বোনের চরিত্র নিয়ে কথা উঠল। কাউকে টার্গেট করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নানা উপায়ে অপমান করা হয়। এমন ঘটনা বিগত সময়ে বহুবার দেখেছি আমরা।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের সময় সাংবাদিকরা খুব ভয়ে ভয়ে বোধহয় কাজ করেছেন, আমরা মনে করে থাকি। কিন্তু দেখা গেছে, অনেকে খুবই আনন্দের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের অংশ হয়েছেন।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে কারণ এটি এজেন্ডা তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম যে এ কাজটাও করতে পারে না তার প্রমাণ আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান।’

চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের প্রধান নির্বাহী তালাত মামুন বলেন, শিকারি সাংবাদিকতার যে ১৫ বা ১৬ বছরের হিসাবটা নিয়ে অধ্যাপক আ-আল মামুন বই লিখছেন। এমন গবেষণামূলক কাজ জারি রাখা উচিত। কারণ, অনুসন্ধান না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না।