• বুধবার , ২ এপ্রিল ২০২৫

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বলেছে- টিভি চ্যানেলে জনস্বার্থ ছিলনা- ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার পরামর্শ


প্রকাশিত: ৩:৪১ এএম, ২৩ মার্চ ২৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩ বার

 

স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক পরিচয় ও অন্ধকারে রেখেই গণমাধ্যমের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। সব কয়টি টেলিভিশনের আবেদনে দেখা গেছে জনস্বার্থ কোনোটিতেই ছিল না। সবই রাজনৈতিক পরিচয়ে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও সাংবাদিকদের প্রবেশপদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেড করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ অর্থাৎ একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান না রাখার সুপারিশ করেছে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেন। পরে যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের মালিকানায় সমস্যা রয়ে গেছে। অনেক সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা বলেছি ক্রস ওনারশিপ বাতিল করতে হবে। একই মালিকের একাধিক সংবাদমাধ্যম থাকতে পারবে না। একটিকে বেছে নিতে হবে মালিককে। সে ক্ষেত্রে অন্যগুলোর মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে অথবা যেটি সবচেয়ে শক্তিশালী তার সঙ্গে একীভূত করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সেটিও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, একই ব্যক্তি টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের মালিকানা নিতে পারে না যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন বিধান আছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ইতিহাস পর্যালোচনা করে কোথায় কোথায় ত্রুটি রয়েছে তা বের করার চেষ্টা করেছি। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, রেডিও ও অনলাইনে বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে, তবে সাংবাদিকতার সমস্যা সব জায়গায় একই ধরনের।

একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সে সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজ স্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এই ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যমান এ ব্যবস্থার দ্রুত সমাধান করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করা যেমন বাজারের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে, একই মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ জন্য এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া) নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায় বলে মনে করে কমিশন।

টেলিভিশনের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনের আবেদন দেখেছি, কোথাও জনগণের কথা বলা হয়নি। সবাই সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরতে চেয়েছে, ইতিবাচক সংবাদ-কনটেন্ট দেখাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর লাইসেন্সের আবেদন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র এবং লাইসেন্সধারীদের অঙ্গীকারনামা পর্যালোচনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এসব লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতি অনুসৃত হয়নি। যেহেতু সম্প্রচার নীতিমালায় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা আছে এবং সম্প্রচার লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করার দায়িত্ব সম্প্রচার কমিশনের এবং যেহেতু গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গণমাধ্যমের সব বিষয় অর্থাৎ সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইনের জন্য বিদ্যমান প্রেস কাউন্সিল ও প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের দায়িত্ব ও ক্ষমতার সমন্বয়ে গণমাধ্যম কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে, সেহেতু বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্সসমূহ পর্যালোচনার দায়িত্ব গণমাধ্যম কমিশনই পালন করবে। সে অনুযায়ী সুপারিশগুলো করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এই দুটি সংবাদ মাধ্যম চালাবে, এর জন্য একটি সম্প্রচার সংস্থা করার কথা বলেছি। কমিশন মনে করে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বাসসকে বিটিভি ও বেতারের নতুন সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানের বার্তা বিভাগ হিসাবে একীভূত করাই হবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। এই কেন্দ্রীয় বার্তা কক্ষের তৈরি খবর বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে সুষ্ঠু নতুন প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা নামকরণ করা যেতে পারে। এই নতুন প্রতিষ্ঠানের তিনটি বিভাগ থাকবে-টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ।

কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতার পথে বাধা তৈরি করে এমন যেসব আইন ও সরকারি নীতিমালা রয়েছে সে সম্পর্কে সুপারিশ দিয়েছি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রেখেছি। এমনকি আমরা আইনটি কেমন হতে পারে তার জন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশও যুক্ত করে দিয়েছি। উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারতে এমন আইন পার্লামেন্টে বিবেচনাধীন রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে এই আইন করেছে। সেখানে চাইলেও সাংবাদিকের ফোন তল্লাশি করতে পারে না সরকারি-বেসরকারি কেউ। আর ওয়েজবোর্ড নিয়ে মামলা চলমান, এই অবস্থায় কীভাবে এটি নিয়ে কাজ করা যায় তাও বলা হয়েছে।

কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে দেওয়া যাবে না। সাংবাদিকের কাজ সাংবাদিকতা করা। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দরকারের বিষয়েও সুপারিশ করেছে কমিশন।

এ বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশপদ, অর্থাৎ নবম গ্রেডের বেতন স্কেলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সাংবাদিকদের প্রবেশপদের বেতন হতে পারে। সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য এটি হতে পারে। তবে ঢাকায় যেহেতু জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, সে ক্ষেত্রে ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ভাতা’ যোগ করা হতে পারে। সারা দেশে সাংবাদিকরা যে বেতন পাবেন, ঢাকার ক্ষেত্রে এই ভাতা যোগ হবে। এই ভাতা ঠিক করবে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন পক্ষ মিলে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন শুরু হয় ২২ হাজার টাকা দিয়ে। এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা যোগ হয়। সব মিলিয়ে এই বেতন হয় ৩৫ হাজারেরও বেশি।

এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে সে বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, সম্পাদক ও প্রকাশকের যোগ্যতা কী হবে, সেই তিনটি বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা একটি শর্তও যুক্ত করেছেন। সেটি হলো, এক বছর শিক্ষানবীশ থাকার পরে পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা পাবেন। এ রকমভাবে গণমাধ্যম নিয়ে আরও বিভিন্ন সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবে না। তিন বছর সংবাদদাতা (রিটেইনার) হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা নিজস্ব প্রতিবেদক (স্টাফ করেসপনডেন্ট) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করবেন। মূল বেতনের বাইরে সাংবাদিকরা বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা, ঝুঁকি ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ফোন বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অবসর ভাতা কিংবা গ্র্যাচুইটি প্রাপ্য হবেন।

প্রতি বছরের শুরুতে পূর্ব বছরের গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রেও অন্তত দুই বছর পরপর মূল্যস্ফীতি সামঞ্জস্য করে পুর্ননির্ধারণ করতে হবে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য আলাদা একটি নিয়োগ বিধি এবং একটি ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। কোনো গণমাধ্যমে সাংবাদিককে সার্কুলেশন তদারকি এবং বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (কন্ডিশনস অব সার্ভিসেস অ্যাক্ট) ১৯৭৩ এবং শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোকচিত্রী/ভিডিও সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।

ডিএফপির মিডিয়া তালিকায় বিস্তর সমস্যার কথা তুলে ধরেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান। তিনি বলেন, আজকের দিনে ঢাকায় ১ কোটি ৫১ লাখ পত্রিকা ছাপা হয়েছে সরকারি হিসাব মতে। কিন্তু বাস্তবে ১০ লাখের বেশি হবে না। তা হলে এই ১ কোটি ৪১ লাখ পত্রিকার হিসাব কেন এলো। সরকারি বিজ্ঞাপন নেওয়ার জন্য এসব কারসাজি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি ডিএফপির তালিকায় ছয়শরও বেশি পত্রিকা রয়েছে, অথচ ৫২টি পত্রিকা বিক্রি হয় ঢাকায়। দুটি প্রতিষ্ঠান সংবাদপত্র সরবরাহের কাজ করে ঢাকায়। তাদের হিসাব দেখলেই অনায়াসে এই তথ্য পাওয়া যায়।

টেলিভিশনের টিআরপির ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উল্লেখ করেন কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, টিআরপি কত তা দেখার জন্য আট হাজার ডিভাইস বসানোর কথা সারা দেশে। ২০০ ডিভাইস বসানো হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় আরও একশ বসানো হয়েছে। এগুলো বসাতে হবে এবং সব যাচাইযোগ্য হতে হবে। যাচাই শুধু সরকার বা ওই টেলিভিশন করতে পারবে না, তৃতীয় পক্ষ দিয়ে যাচাইয়েরও সুযোগ থাকতে হবে। আর সেই তৃতীয় পক্ষ হবে নাগরিক সমাজ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অধ্যাদেশের খসড়াসহ ১৮০ পাতার পুরোটা অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যে কেউ চাইলে দেখতে পারবেন কী কী সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

কামাল আহমেদ বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হলে পরিচালনা ব্যয় অনেক কমে আসবে। এতে করে মিডিয়া শিল্পে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যা গণমাধ্যমগুলোর টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।গত বছরের ১৮ নভেম্বর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিবেদন জমার সময় দেওয়া হয় কমিশনকে। ১০ দিন হাতে রেখেই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলোর অধিকাংশই যৌক্তিক। ওয়েজবোর্ড যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে বেশিরভাগ সমস্যা থাকবে না।

সাংবাদিকদের অবসর ভাতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। পেশাজীবী রিপোর্টারদের সর্ববৃহৎ সংগঠনের নেতা সোহেল আরও বলেন, একাধিক মিডিয়ার মালিক থাকতে পারবেন না, এটি ভালো উদ্যোগ। টাকা থাকলেই মিডিয়ার মালিক থেকে মাফিয়া হয়ে ওঠার পথ রুদ্ধ হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। আমাদের পক্ষ থেকেও কমিশনের কাছে এই পরামর্শ ছিল। যেহেতু জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, সে ক্ষেত্রে ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ভাতা’ যোগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো খুব পজেটিভ। তিনি বলেন, বছরের পর বছর শিক্ষানবীশ হিসেবে রেখে দিলে একজন সাংবাদিককে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এক বছর শিক্ষানবীশ শেষে তাকে রেগুলার সাংবাদিক হিসাবে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ঠিক করা হয়েছে তা সাংবাদিকদের জন্য পজেটিভ।
গণমাধ্যম সুরক্ষা আইন করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও হুমকির শিকার হচ্ছেন। সুপারিশে ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কমিশন কি বোঝাতে চেয়েছে, গ্রুপ অব কোম্পানি একাধিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করলে আপত্তি থাকার কথা নয়।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত সাংবাদিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করবে সরকার। সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে কল্যাণ অনুদান দেওয়ার হয়তো প্রয়োজন হতো না। গণমাধ্যম মালিক, সম্পাদক ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের উপসম্পাদক টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন।