গণভবনে শেখ হাসিনার গৃহস্ত বাড়ি
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘোষণা দেন, তা নিজেও বাস্তবায়ন করেন। তেমনি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘোষণায় শুধু দেশবাসীকে জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি, নিজেও করিয়ে দেখিয়েছেন। নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামের গেরস্ত বাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামারবাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল উদাহরণ। গণভবনের বিশাল আঙিনায় হাঁস, মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিল-সরিষার মতো পিঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, গতকাল মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পিঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পিঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি পিঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পিঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি হিসেবে পিঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পিঁয়াজে ৭ হাজার ৮০০ পরিবারের ১ মাসের পিঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি, মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তাঁর প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠানে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত। ইহসানুল করিম জানান, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, গণভবন আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন। এ ছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা খেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পিঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈবসার।
এ ছাড়াও গণভবনের আঙিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজাহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি। গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।