গণভবনের ভুয়া বাবুর্চি’র প্রধানমন্ত্রীর সই তেলেসমাতি
স্টাফ রিপোর্টার : গণভবনের ভুয়া বাবুর্চি’র এবার প্রধানমন্ত্রীর সই দিয়ে তেলেসমাতি করতে গিয়ে অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের খাঁচায়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই জাল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সুপারিশপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন ওই বাবুর্চি হাচিনা বেগম।
ওই চিঠি ফ্যাক্সে আসে। আবার সশরীরেও তা নিয়ে হাজির হন ওআি হাচিনা। ওই নারীর বুকে পরিচয়পত্র ঝোলানো। সেখানে লেখা আছে, ‘মোছা: হাছিনা বেগম, পদবী : বাবুর্চি, কর্মস্থল : গণ ভবন ও বাস ভবন’।
আজ রোববার হাছিনা বেগম নামের ওই নারীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ নজরদারি প্রক্রিয়ায় থাকার পর সই জালিয়াতির অভিযোগে হাছিনা বেগমকে আটক করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই জাল করে ওই সুপারিশ নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, হাছিনা বেগমের ওই পরিচয়টিও ভুয়া। অর্থাৎ ভুয়া পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে হাছিনা বেগম নামের ওই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারিশপত্র নিয়ে আসেন।
গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা সুপারিশপত্রে লেখা আছে, ‘আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা, এই মর্মে জানাইতেছি যে, ফাহিম জাহান দৃষ্টি, পিতা : আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাতা রেবেকা সুলতানা, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জন্য আবেদন করে যাহার ভর্তির রোল নং- ৩৯০৪৭। উপরে বর্ণিত ফাহিম জাহান দৃষ্টি আমার সু-পরিচিত এবং নিকটআত্মীয়। তিনি যথেষ্ট মেধাবী ও পরিশ্রমী। এমতাবস্থায় তিনি যাহাতে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইতে পারে এবং দেশ ও জাতির কল্যানে মঙ্গল বয়ে আনতে পারে, তাহার জন্য আদেশ প্রদান করা হইল।’ ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘অতএব উপরে উল্লেখিত ফাহিম জাহান দৃষ্টি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশষ কোঠায় ভর্তি হইতে পারে তাহার সু-ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে আদেশ প্রদান করা হইল।’
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, একই ব্যক্তির ভর্তির সুপারিশের জন্য গত ৭ ডিসেম্বর এবং গত ১২ ডিসেম্বর দুটি সুপারিশ আসে। ওই সব সুপারিশে স্বাক্ষর আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রটোকল অফিসার মনজিলা ফারুক, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন উপাচার্যকে কখনো এভাবে ডিও লেটার পাঠান না। প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা পড়ে না। এটা বিরল। আর একজন শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করবেন তা আমার বিশ্বাস হয়নি। তখনই আমার সন্দেহ হয়। আর চিঠিটিতে অনেক ভুল আছে। এসব ভুল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় করবেন বলে মনে হয় না।’
উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহম্মেদ আরো বলেন, ‘এর আগে একই নামে ভর্তির সুপারিশ আসে দুইবার। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নামে আবারও সুপারিশ আসে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হওয়ার এটাও একটা কারণ। আর ওই নারী একাধিকবার চিঠিটি নিয়ে আসেন। গলায় ঝোলানো থাকে গণভবনের কার্ড। আমি গোপনে খোঁজ-খবর নিতে থাকি। গণভবনেও খোঁজ নিতে থাকি। একপর্যায়ে সেখান থেকে নিশ্চিত হই, প্রধানমন্ত্রী কোনো সুপারিশ করেননি। আর এই নামে কেউ সেখানে নেই।’
উপাচার্য কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আমাকে বলেছেন, এ ধরনের কোনো কাগজে তিনি সই করেননি। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’ তিনি আরো জানান, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর ওই নারীকে আটক করা হয়। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে একটি মামলা করা হবে বলে জানান উপাচার্য।
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাছিনা বেগমকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে ভর্তির ব্যাপারে সুপারিশ করেছিল বলে আমাদের জানানো হয়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সই জালিয়াতি করেছেন বলে শুনেছি। এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।’