গণতন্ত্র রক্ষায় আজ মোদির সহযোগিতা চাইবেন খালেদা জিয়া- বিকেলে সোনারগাঁও এ সাক্ষাৎ
এস রহমান.ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন বাংলাদেশে সফরে রয়েছেন। তার এই সফরকে বিএনপি ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। মোদির এই সফরে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরালো করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মোদির তরফ থেকেও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরালো করার ব্যাপারে আগ্রহের কমতি নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে রোববার বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিটের বৈঠক হতে পারে। এরমধ্যে একান্ত বৈঠকও হতে পারে কিছু সময়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সাধারণ বৈঠকের পাশাপাশি কিছুটা সময় মোদির সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চান। এই সময়ে তিনি বিজেপি-বিএনপির সম্পর্ক, বিএনপি- মোদির সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরালো করার উপর জোর দিবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই নির্বাচন যে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি সেই অভিযোগ করে তিনি আগামী দিনে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা চাইবেন। কারণ বিএনপি মনে করছে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আগাম নির্বাচন হতে হবে। সেটা করার জন্য অবশ্যই ভারতের সহযোগিতা লাগবে। সেই সহেযোগিতাই বেগম খালেদা জিয়া চাইবেন। খালেদা জিয়া সীমান্ত বিল বাস্তবায়নের জন্য ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের বিল পাস হওয়ার পর মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবেন। তিস্তা চুক্তি করার ব্যাপারেও অনুরোধ জানাবেন।
বিএনপির নীতি নির্ধারনী একটি সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দু’একটি দেশ ছাড়া প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহলের কোন সমর্থন ছিল না। ওই সময়ে ভারত সরকার এই নির্বাচনে সহায়তা করেছিল। ভারতের ওই সময়ের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নিজে বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচন যথা সময়ে হওয়ার কথাও বলেন। ওই সময়ে বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অষ্ট্রেলিয়া, ইউএনডিপি কেউ মেনে নেয়নি। তারা সবাই ওই নির্বাচনের সমালোচনা রেছে। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে। তবে ওই নির্বাচন নিয়ে ভারত সরকার কখনো কোন বিরোধিতা করেনি এমনকি তারা এখনও এই ব্যাপারে কোন কথা বলছে না। বরং তারা কোন দলের সঙ্গে নয় এই দেশের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে ঘোষণা করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এই কারণেই জনগণ যে দিকে থাকবে তারা সেই দিকে থাকতে চাইছে। এই জন্য মোদিকে খালেদা জিয়া সরকারের সমালোচনা করা ছাড়াও এই সরকার যে বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন করছে, রাজনৈতিক ও মিথ্যে মামলা করছে, নেতা কর্মীদের জীবন নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। ভারত বিশ্বের বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে যেভাবে কাজ করছে বাংলাদেশে সেটা নেই তাও তুলে ধরবেন। এই সব ব্যাপার তুলে ধরে এখন দেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে সেটাও তুলে ধরে বলবেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা চাইবেন। নিদর্লীয় সরকারের অধিনে আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া ছাড়াও তিনি মোদি সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। সেই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক, কুটনীতিক সম্পর্ক জোরালো করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে তার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক যাতে আরো বাড়ে, সহযোগিতা বাড়ে, দুই দেশ ইতিবাচক সুবিধা পেতে পারে সেই সব বিষয়েও সহযোগিতা চাইবেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির সূত্র জানায়, মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত সরকার এই যাবত কালে যে বাংলাদেশের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেই ব্যাপারে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি ভবিষ্যতে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতেও অনুরোধ করবেন। বাংলাদেশে বিএনপি নেতাদের জীবন ও নিরাপত্তা হুমিকর মুখে বিষয়টি উল্লেখ করে সালাউদ্দিন আহমদের ঘটনাটি তুলে ধরবেন। সালাউদ্দিনের সুকিচিৎসার অনুরোধ করা ছাড়াও তার যাতে বিদেেেশ চিকিৎসার সুযোগ পান সেই ব্যাপারেও সহযোগিতা চাইবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, রাষ্ট্রীয় সফরে মোদি বাংলাদেশে আসায় তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। মোদি সরকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করছে। সেই হিসাবে তারা সহযোগিতাও চাইবেন।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবেও বিএনপির অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন। দলের তরফ থেকে এই ব্যাপারে ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যুবদল এর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। মোদি গণতন্ত্রের জনক। আশা করি গণতান্ত্রিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশে যাতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেজন্য শিষ্টাচারের মধ্যে যতটুকু পরে ততটুকু তিনি ( মোদি) করবেন।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তিনি তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে উঠে এসে আজকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ভারত বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের সংবিধানে বলা আছে, ভারত তাদের স্বার্থে বিশ্বের যেকোনো দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করবে। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তখনকার সরকার বাংলাদেশের এমন একটি দলকে সমর্থন দিয়েছে যাদের ১৫৪ জন সংসদ সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।
এদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, খালেদা-মোদির বৈঠক হবে বিকেল চারটায়। এই বিষয়ে বিএনপি আগে থেকে দাবি করে আসছিল নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও সাক্ষাৎ দেবেন। কিন্তু ভারত সরকারের তরফ থেকে এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর।
মোদি শনিবার ঢাকায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন। রোববারও ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করবেন। তিনি সফরের দ্বিতীয় দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনে যাবেন। বারিধারায় ভারতীয় হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সারি ভবনে যাবেন। সেটার উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। অংশ নিবেন মধ্যাহ্ন ভোজে। সেখান থেকে ফিরবেন সোনারগাঁও হোটেলে। হোটেলে তিনি বাংলাদেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক ব্যক্তির সাক্ষাৎ করবেন। বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, নেতৃস্থানীয় চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে তার পররাষ্ট্র বিষয় নিয়ে কাজ করনে এমন এক উপদেষ্টা বলেন, রোববার বিকাল ৪ টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকবেন। এই সব আনুষ্ঠানিক বৈঠক এর পাশাপাশি মোদি চাইলে একান্ত বৈঠকও হতে পারে। বিএনপির তরফ থেকে মোদির জন্য বেশ কয়েকটি সিডিও তুলে ধরা হবে। যাতে করে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়টি নিয়ে সব জানতে পারেন।
বিএনপির সূত্র জানায়, মোদি, মোদি সরকারের সঙ্গে বিএনপি সুসম্পর্ক রাখতে চাইছে। সরকার বিএনপিকে ভারতবিরোধী বললেও বিএনপি মোদির ভারত সরকারের সঙ্গে সখ্য গভীর করতে চায়। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত চাইলে সহযোগিতা করতে পারে। তারা নিয়মের মধ্যে থেকে পারবেন না এটা মুখে বললেও বাস্তবে তাদের প্রভাব রয়েছে। কূটনীতিক শিষ্টাচার ও নিয়মের মধ্যে মধ্যে যতটুকু পড়ে নরেন্দ্র মোদি ততটুকু করবে বলে আশা করা যায়।
তবে বিএনপি বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা চাইলেও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য ভারত কি করবে বলে মনে করছে বিএনপি। এদিকে বিএনপি এটাও দেখতে চাইছে, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ভারত কতটুকু পেয়েছে আর বাংলাদেশ কতটুকু পেল।
বিএনপি এটাও মনে করছে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই এমনটা জানিয়ে হান্নান শাহ বলেন, ভারতকে সীমিতভাবে ট্রানজিট দেয়া যেতে পারে। তবে কর পেতে হবে বাংলাদেশকে। এই ব্যাপারে আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, ট্রানজিট দেওয়ার সময়ে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে ট্যাক্স পাবে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু একটা টাকাও পাওয়া যায়নি। ট্রানজিট শব্দে বাংলাদেশের আপত্তি দেখে ভারত একে কানেক্টিভিটি নাম দিয়েছে। আমাদের দাবি, আমার দেশের মাটি, রাস্তা ব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে হবে।
উল্লেখ্য, মোদি-খালেদার বৈঠকটি যাতে না হয় সেই জন্য প্রটোকলের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছিল। প্রটোকল অনুযায়ী তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ না থাকলেও মোদি ব্যক্তিগতভাবেই দেখা করছেন।