• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

গণজাগরণ মঞ্চে জামায়াতের ছোবল!


প্রকাশিত: ১:৫২ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৬ বার

 

শফিক আজিজি,ঢাকা:
জনা চল্লিশেক কর্মী, একটি মাইক সেখানে ঝুলছে শাহবাগ আন্দোলনের ব্যানার।শাহবাগে তিন পক্ষের চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় গণজাগরণ মঞ্চের এক পক্ষের নেতা ইমরান এইচ সরকার আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছবি: ফোকাস বাংলাতার একপাশে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানার। সেখানে শ দুয়েক লোক। এক ডজন মাইক। আরেক পাশেও শ খানেক লোক। সেখানেও ডজন খানেক মাইক; সেখানেও গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানার।
তিন পক্ষই পাল্টপাল্টি স্লোগান আর বক্তব্য দিচ্ছে। তবে কে যে কী বলছে সেটি বোঝা দায়।
আর এই সমাবেশ শেষে তিন পক্ষে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে গণজাগরণ মঞ্চের এক পক্ষের নেতা ইমরান এইচ সরকারসহ অন্তত সাতজন আহত হন।

আজ শুক্রবার বিকেল থেকে এই অবস্থা চলছে রাজধানীর শাহবাগে। মানতাবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে একই সময়ে শাহবাগে সমাবেশ করছে গণজাগরণ মঞ্চের তিনটি অংশ। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘিরে রেখেছিল ওই এলাকা।
জাদুঘরের প্রধান ফটকের বাঁ-পাশে অবস্থান নিয়ে বিকেল চারটার দিকে সমাবেশ শুরু করে কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ। তাঁদের ব্যানারে লেখা ‘কুখ্যাত রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ’। এটি সঞ্চালনা করেন এস এম শাহিন আহমেদ। সেখানে একে একে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা জহিরুদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, আবুল খায়ের, মোরসেদুল হাসান প্রমুখ।
সমাবেশের এই অংশের স্লোগানগুলো হলো, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’;

‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। এখানে বক্তারা বলছেন, সাঈদীর ফাঁসি না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। এ দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার কেউ করলে আওয়ামী লীগই করবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের লেবাস গায়ে লাগিয়ে অনেকেই সরকারবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জাদুঘরের প্রধান ফটকের ডান পাশে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু হয় ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের। এ

টি সঞ্চালনা করছিলেন ব্লগার মারুফ রসুল। এখানকার ব্যানারে লেখা, ‘রাজাকার সাঈদীর ফাঁসির রায় প্রত্যাখ্যানপূর্বক জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সরকারের টালবাহানার প্রতিবাদে গণ-সমাবেশ’। ছাত্র ইউনিয়ন ও কয়েকটি বাম সংগঠনের সাবেক ছাত্রনেতারা এখানে আছেন।
এই সমাবেশ থেকে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল, ‘আপসের পরিণাম বাংলা হবে পাকিস্তান’; ‘সাঈদী চোরার ফাঁসির রায়, বেইচা দিলা কয় টাকায়?’; ‘জ্বালো, জ্বালো আগুন জ্বালো।’
সমাবেশের এই অংশ থেকে সাঈদীর ফাঁসির রায় না হওয়ায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে এখান থেকে।
এই দুই পক্ষের পক্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের শুরু থেকে ক্রিয়াশীল জাসদ ছাত্রলীগ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টি নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি সংগঠন। এখানে ব্যানারে লেখা ‘এ রায় মানি না, সাঈদীর ফাঁসি চাই’।
এই অংশের নেতা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদীত্য বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই পাশে গণজাগরণ মঞ্চের দুই পক্ষ। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। সাঈদীর বিচার চায়। অথচ এখানে তারা পরস্পরকে গালিগালাজ করছে। এভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হয় না। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছি। কিন্তু কেউ শুনছে না’।

সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের সময় গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা ইমরান এইচ সরকারের বক্তব্য শেষ হয়। এরপর তাঁর নেতৃত্বে শাহবাগের জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি টিএসসি ঘুরে শাহবাগে সমাবেশ শেষে মিছিল করতে চাইলে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। ছবি: ফোকাস বাংলাশাহবাগের ফুলের দোকানগুলোর সামনের সড়কে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ইমরানপন্থী কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি চলে।

একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে ইমরানসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ সময় ইমরানপন্থী কর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করেন। এ সময় ইমরানের কয়েকজন কর্মী কামাল পাশা চৌধুরীদের অবস্থানের কাছে এলে তাঁরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে শুরু করেন এবং তাঁদের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারেন।

শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ হামলা প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। ঘটনার সময় শাহবাগ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলায় কামাল পাশা চৌধুরীর পক্ষের রেজোয়ান, মেহেদী হাসান ও মেজবাহ আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কামাল পাশা চৌধুরী, লাকী আক্তারসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সংগঠকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ইমরান এইচ সরকার বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর কর্মীরা দাবি করেছেন, পুলিশের হামলার পর কামাল পাশার লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

তবে ঘটনার পর শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন করে কামাল পাশা চৌধুরী দাবি করেন, তাঁদের ওপর ইমরানরা হামলা চালিয়েছেন। আর বাপ্পাদিত্য বসু দাবি করেছেন, ইমরানের সঙ্গে থাকা ছাত্রদলের ক্যাডার আরিফ জেবতিক আর শিবির ক্যাডার ‘সবাক পাখি’ তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের তিনজন নারী কর্মীকে লাঞ্ছিত করেছেন।