• বুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪

খোলামেলা নায়িকা হ্যাপি হঠাৎ হিজাবের লেবাসে-নেপথ্যে কে?


প্রকাশিত: ১:৩৬ এএম, ২৫ মে ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৭০ বার

মরিয়ম সুলতানা   :   ‘নাজনিন আক্তার হ্যাপ’ কলুষিত নোংরা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া এবং Naznin-Akter-Happyইসলামের সু-শীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া এক জীবন্ত নাম। আজ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তার জীবন বদলে যাওয়ার স্মৃতি তুলে ধরেছেন। নিম্নে তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:-

“পরিষ্কার মনে আছে আমার,গত বছরের আগস্ট মাসের কথা,সকালটা শুরু হয়েছিল একি-ই ভাবে যেমনটা সেই সময়ে নিয়মিত হতো।আম্মুর চেচামেচিতে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকানো আর প্রতিদিনের মত ১-২ টার কাছাকাছি সময় ছুইছুই করছে সেই দৃশ্য দেখা!

তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে রেডি হচ্ছিলাম ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। সেদিনও যথারীতি ৪-৫ টা ড্রেস ট্রায়াল দেওয়া যেটা সবসময় বের হওয়ার সময়-ই করা হত ,কোন ড্রেসে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে এই নিয়ে দ্বিধায় পড়া! তারপর ম্যাচ করে জুতা,ব্যাগ,অর্নামেন্টস,মেক-আপ!এই করতে করতেই প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা!

ফাইনালি বের হতে হতে সেদিন বিকাল ৪ টা বেজেছিল আর পৌছেছিলাম ৫টার দিক সম্ভবত, জ্যাম ঠেলে বনানী ১১ নাম্বার রোডের রুফটপের সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়া ,যেখানে আমি খুব শান্তি অনুভব করতাম,খোলা আকাশ,ন্যাচারাল হাওয়া,হালকা মিউজিক, আর বিফ স্টেক,স্কুইড ফ্রাই,ফিশ ফিঙ্গার,ওয়াটার মেলন জুস এগুলো ছিল ঐ রেস্টুরেন্টের ফেভারিট ফুড আর রেগুলার মেন্যু। আমি ওখানে ফ্রেন্ডদের সাথে অনেক বেশি আড্ডা দিতাম। ঐ জায়গা টা এতটাই পছন্দ ছিল যে কোন বিশেষ কাজ ছাড়া সপ্তাহে ২-৩ দিন-ই যাওয়া হত।
happY-mirpur-hijab
যাইহোক,বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টার একটু বেশি বেজেছিল।বাসায় ফিরে ফ্রেশ না হয়েই ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলাম তারপর আম্মুর বকাবকি শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ড্রেস চেইন্জ করে ফ্রেশ হলাম,এটাও নিয়মিত ঘটনা ছিল যে বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়েই অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া।

আমি তখন সারা রাতভর জেগে থাকতাম হয়তো সাউন্ড বক্স দিয়ে জোরে গান শুনতাম বা মুভি দেখতাম অথবা সব বন্ধ করে চুপচাপ বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম অথচ কখন সকাল হয়ে যেত টেরও পেতাম না।

তবে সেই রাতটা ছিল আমার জন্য অন্যরকম রাত।তখন আমার বাসার সবাই ঘুম ছিল। আমি খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কোলের উপরে ল্যাপটপ রেখে ইউটিউব থেকে পিটবুল, সেলেনা গোমেজ আর জেনিফার লোপেজ এর পছন্দের কিছু গান শুনে নতুন মুভি সার্চ করতে লাগলাম,হঠাৎ নিচে তাকাতেই একটা মুভি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল “ The message ” এই মুভিটা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে নিয়ে নির্মিত।

দেখা শুরু করলাম।আমি অনিচ্ছাবশত-ই মুভিটার গভীরে চলে গেলাম,মনে হচ্ছিল সবকিছু আমার সামনে ঘটছে! হঠাৎ ই আমার নবীর জন্য অদ্ভূত একটা মায়া,সম্মান,ভালবাসা যেন অন্তরে কয়েক কোটিগুন হয়ে তীরের মত লাগা শুরু করল,যখন দেখছিলাম যে,মক্কার কিছু লোক আমার নবী ও তার সাহাবীদের উপর কতটা নির্যাতন চালিয়েছে!

চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল,আমার আল্লাহর কথা ভেবে। আমার নবীর বাণী,নবীর আদেশ,নবীর ভবিশ্যত বাণী,আল্লাহর হুকুম,আল্লাহর পবিত্র কোরআনের কথা,জাহান্নাম,এসবকিছু স্পষ্ট অনুধাবন করতে লাগলাম।

মুভি শেষ করলাম। আমার মনের অবস্থা তখন কেমন তা কোন ভাষা দ্বারাই বোঝানো সম্ভব নয়।তারপর নিচে আরেকটি মুভি চোখে পড়ল,হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাহিনী অবলম্বনে।ইরানের মুভি ছিল সম্ভবত।

ঐটাও দেখা শুরু করলাম।এই মুভিরও গভীরে চলে গেলাম।ভয়ে মনে হচ্ছিল পুরো শরীর জমে গেছে,নিঃশ্বাস খুব ধীরে ধীরে হচ্ছিল। এই মুভির মধ্যের কোরআনের আয়াতগুলোও অন্তরে খুব কঠিনভাবে বসে যেতে থাকল।

শরীর ঘামছিল, অসস্তিবোধে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিল, হায়! আমার কি হবে? আমি কি করব? আল্লাহকে কি জবাব দিব? এইরকম প্রশ্নে মনের ভিতরে এক অন্যরকম অবস্থার তৈরী হল।মনে হচ্ছিল এই বুঝি আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করবে।এতদিন আল্লাহর হুকুমের উপর না চলায় আফসোস করে করে অসহায় লাগছিল।

রাত তখন প্রায় শেষে।তওবা মুখস্থ করলাম,ফরজ গোসল কিভাবে করতে হয় জানলাম, গোসল করলাম,তওবা করতেই থাকলাম।ঐ মুহূর্ত থেকে দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা কোথায় গায়েব হল অবশ্যই সেটা আমার আল্লাহ-ই ভাল জানেন।

আজান পড়ল,সর্বনাশ ঠিকমত নামাজ তো পড়তে পারি না!কি হবে? নামাজ শিক্ষা বই খুজে পেলাম অনেক কষ্টে,মোটামুটি অজু আর নামাজের নিয়ম দেখে নামাজে দাড়িয়ে গেলাম।কারন পুরোপুরি নামাজ শিখে নামাজ পড়ার মত ধৈর্য্য তখন ছিল না।তারপর আস্তে আস্তে নামাজের সব দোয়া ও সূরা মুখস্থ করলাম। সহীহভাবে নামাজ পড়া শিখলাম, এস্তেগফার আর তওবা করতে থাকলাম আলহামদুলিল্লাহ!

তখন ইউটিউবে বড় বড় আলেম,মুফতির প্রচুর লেকচার শুনেছিলাম,ইসলামকে ভালভাবে মানার জন্য কি করলে ভাল হবে এসব ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।তারপর হাদীস পড়া শুরু করলাম,কোরআনের অর্হ ও তাফসীর নিয়ে সারাদিন রাত পড়ে থাকতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ!

কিছুদিন পর মনে পড়ল ছোটবেলায় একবার দাদীর সাথে তালীমে গেছিলাম,সেখানে তো দ্বীনের আলোচনা হয়। ভাবলাম এখনও কি এসব হয়?যদি হয় তাহলে তো খুব ভাল হবে আমার জন্য ।কিন্তু তালীম যে সবখানে সে সম্পর্কে জানতাম না।

আমার কাছের এক বান্ধবী আছে,অনেক আগে একবার কথায় কথায় বলছিল ওর পরিচিত একজন হুজুর আছে যার কাছে ওর কি যেন একটা জানার আছে,তাই তার বাসায় যাবে সঙ্গে আমাকে নিতে চেয়ছিল।সেই হুজুরের বাসায় আবার তালিম হয়,এটা মনে পড়ার সাথে সাথে ওর কাছ থেকে ঠিকানা জানলাম। সেটা ছিল ধানমন্ডিতে।হুজুরের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে গেলাম তালিমে। ২-৩ বার যাওয়ার পর জানলাম যে, সব এলাকাতেই নাকি তালীম হয়। তারপর আমার এলাকার কোথায় তালীম হয় খুঁজলাম,পেলাম আলহামদুলিল্লাহ!যাওয়া শুরু করলাম।

প্রথম ২-৩ মাস পর থেকে যদিও ইসলামিক ভিডিও আর দেখা হয় নি আর টিভি দেখা বা গান শোনার তো প্রশ্নই ওঠে না। আলহামদুলিল্লাহ! তারপর পর্দা সহ আল্লাহর সব আদেশ-নিষেধ মানার চেষ্টা করে আসছি,আর কিছুই জানি না।”আমাদের সবাইকে আল্লাহ যেন তাঁর পথে নিয়ে আসার তৈফিক দান করেন।