খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের ভোটে রক্তরক্তি
খুলনা প্রতিনিধি : খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের ভোটে রক্তরক্তি’র ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে ভোট গণনাকালে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা স্টেডিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। স্টেডিয়াম ভবন ভাঙচুরে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর ভোটগণনা স্থগিত করে প্রশাসন।আওয়ামী লীগ দলীয় দু’টি প্যানেলে ২০জন করে মোট ৪০জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম দুটি প্যানেলের নেতৃত্ব্বে ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা স্টেডিয়ামে শিশু ফাউন্ডেশনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। মোট ২ হাজার ১৮৪ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৮৮৭ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। এতে অ্যাডভোকেট সাইফুলের প্যানেল এগিয়ে ছিল। এরই মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাত করে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল জেলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা স্টেডিয়ামের নিচতলার তিনটি কক্ষ ও দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। চেয়ার, টেবিল, চারপাশের গ্লাস, দরজা, জানালা ভেঙে তছনছ করে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় ভোট গোনা বাদ দিয়ে সকলেই দিক-বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। অতিরিক্ত ফোর্স আসার আগেই সন্ত্রাসী বাহিনী স্টেডিয়াম ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। র্যাব-৬ এর একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনের অন্যান্য মালামাল তাদের হেফাজতে নেন।
এদিকে, ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নূর-ই- আলম ভোট গণনা স্থগিত করেন। তিনি বলেন, সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভোট গণনাকালে দুর্বৃত্তরা স্টেডিয়াম ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য মালামাল হেফাজতে নিয়ে ট্রেজারিতে রাখা হয়েছে। আপাতত ভোট গণনা স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো. আমিন উল আহসান বলেন, এটা একটা সেবামূলক সংস্থার নির্বাচন। এখানে একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা দোষীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তীতে ভোট গণনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরা সুলতানা বলেন, ভোট গণনার সময় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, জেলা স্টেডিয়ামে ব্যাপক ভাঙচুর করায় প্রশাসনকে দুষছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসন আমাদের মতামত না নিয়েই জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন নির্বাচনে ব্যবহার করেছে। গ্লাস ও অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আব্দুল্লাহ আরেফ বলেন, ভাঙচুরের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। হামলাকারিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেছে।
শিশু ফাউন্ডেশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে দুটি প্যানেলে ৪০ জন প্রার্থী ২০টি পদে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। শিশু স্বাস্থ্য সেবা পরিষদ মনোনিত শিশু হাসপাতালের বর্তমান সভাপতি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে ডা. মো. বজলুল হক, ডা. এ, কে, এম কামরুল ইসলাম, ডা. মো. মাহমুদ হাসান লেলিন, এম, ডি, এ বাবুল রানা, অ্যাডভোকেট রজব আলী সরদার, মো. ফেরদৌস আলম চাঁন ফারাজী, মুর্শিদা আক্তার রনি, মো. আলী আকবর টিপু, হালিমা ইসলাম, মো. মুনীর আহমেদ, শেখ মামুন আল হাসান নাজু, সৈয়দ হাফিজুুর রহমান, মোস্তফা কামাল খোকন, আলহাজ্ব জোবায়ের আহমেদ খান জবা, চৌধুরী রায়হান ফরিদ, আল জামাল ভূঁইয়া, খান সাইফুল ইসলাম ও মো. মনিরুল ইসলাম (মাসুম) প্রার্থী হন।
অপর প্যানেলের নেতৃত্বে সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। শিশু স্বাস্থ্য পরিষদের অন্য প্রার্থীরা হলেন, অধ্যাপক শহিদুল হক মিন্টু, মোঃ জামাল উদ্দিন বাচ্চু, মো. শফিকুল আলম তুহিন, মো. রফিকুর ও রহমান রিপন, এ্যাড. কানিজ ফাতিমা আমিন, মো. আব্দুল গফফার, মো. ফারুক আহম্মেদ খান, কে এম ইকবাল হোসেন, এ, কে, এম শাহজাহান (কচি), অ্যাডভোকেট সিকদার হাবিবুর রহমান, মো. তাহিদুল ইসলাম ঝন্টু, মিনা আজিজুর রহমান, জি এম রেজাউল ইসলাম, শাহ মো. জাকিউর রহমান, মো. ইউসুফ আলী, কাজী মাহমুদ আলী, অচিন্ত কুমার ঘরামী, এস, এম মেহেদী বিল্লাহ ও খোকন রায় দীলিপ।