ডেস্ক রিপোর্ট: যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার পরপরই এগুলোর ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে নিজেদের পাতায় প্রকাশ করছেন বিএনপি-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের সমর্থকেরা। এসব ঘটনা ঘটার পরপরই ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমেও।
পুলিশ বলছে, এসব কথিত সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা মূলত নাশকতাকারীদের জনসংযোগকারী হিসেবে কাজ করছেন। নাশকতার ঘটনার ছবি তাঁরা শুধু যে নিজেদের ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করছেন তা নয়, অন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের মধ্যেও বিলাচ্ছেন।
হঠাৎ হামলা, সঙ্গে সঙ্গে ছবি: ‘সকাল ১০টার মতো হবে। হাতিরঝিল দিয়া গুলশানের দিকে যাচ্ছিলাম। নিকেতনে ঢোকার মুখে গাড়ি একটু স্লো চলতাছে। রাস্তার পাশে কয়েকটা ছেলেপেলেরে ক্রিকেটের ব্যাট-স্টাম্প হাতে দাঁড়ায় থাকতে দেখলাম। দেখে মনে হলো খেলতে যাইতাছে। কোনো বলা নাই-কওয়া নাই হঠাৎই গাড়ির গ্লাসে বাইরানো শুরু করল। দুমদুম কইরা কয়েকটা ককটেল ফুটল। ক্যানের মতো একটা বোম মারল, গাড়ির বনেটে আগুন ধইরা গেল। আমরা কোনোমতে বাইর হইছি।’
নিজের গাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার এই বর্ণনা দিলেন গাড়িচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চালান। সেই গাড়িটি গতকাল সোমবার রাজধানীর হাতিরঝিলে সকালে ভেঙে-পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেছেন সিরাজুল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে অন্তত চারটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা হয় আধা ডজনেরও বেশি গাড়ি। তবে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগেই মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. সালাহউদ্দীন।
এদিকে সকালের ওই ঘটনার পরপরই কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েকটি গ্রুপে ওই জ্বলন্ত গাড়িগুলোর ছবি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে
‘বিএনপিদলীয় ব্রেকিং নিউজ’ নামের একটি গ্রুপে ভাঙচুরের সময়কার ও জ্বলন্ত গাড়ির ছবি দিয়ে লেখা হয়—‘মাত্র পাঁচ মিনিটেই গণতন্ত্রকামীদের অভিযানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গুলশানে। অন্তত চারটি প্রাইভেট কার জ্বলছে, একের পর এক ভাঙা হচ্ছে গাড়ি। মিনিট পাঁচেক সময়ে ১০-১২ জন জনতা ভাঙচুর ও আগুন দিয়া নিরাপদে চলে যায়…।’ ওই পোস্ট ও ছবি এরপর ছাত্রদল-বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী তাঁদের পাতায় শেয়ার করেছেন।
ছবির মন্তব্যে ‘খুব ভালো’, ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘শাবাশ’ ইত্যাদি মন্তব্য করে নাশকতাকারীদের উৎসাহও দেওয়া হয়েছে। একই রকম ছবি ও পোস্ট দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফেসবুক ইউজার দল’ ও ‘শিবির ডিসিএন’ গ্রুপের দেয়ালেও। তাঁরা যে ছবিগুলো শেয়ার করেছেন সেগুলো হামলাকারীদের পেছন থেকে বা পাশ থেকে তোলায় মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না। আর যে ছবি সামনে থেকে নেওয়া হয়েছে তাতে একজন হামলাকারীর মুখ অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
হামলাকারীদের পেছন আর পাশ থেকে তোলা কয়েকটি ছবিতে ‘আরটিএনএন’ নামের একটি সংবাদ মাধ্যমের লোগো রয়েছে। আরটিএনএনের ওয়েবসাইটে ঢুকে ওই হামলার সংশ্লিষ্ট সংবাদে হামলা ও গাড়িতে দাউ দাউ আগুনের অনেকগুলো ছবি দেখা গেলেও কোনোটিতেই হামলাকারীদের মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না। তবে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষে এই অগ্নিসংযোগের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু কথিত সংবাদকর্মী আছেন, যাঁরা নাশকতাকারীদের সঙ্গেই থাকেন। ছবি তুলে সবগুলো গণমাধ্যমে বিলিয়ে বেড়ান।