খাবার-বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট-মহা বিপদগ্রস্থ সেন্টমার্টিনবাসী
সেন্টমার্টিন প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে সেন্টমার্টিনের জনজীবন এখন মহা বিপদগ্রস্থ। দ্বীপের প্রায় ৮ হাজার মানুষ আতঙ্কিত। পুরো দ্বীপেই খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপের ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থাই নেই। চরম দুর্ভোগে পড়েছে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষ।
সেন্টমার্টিন বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফেজ ওয়াসিম সোমবার গভীর রাতে বলেন, দ্বীপের একমাত্র সাইক্লোন সেন্টারটি জরাজীর্ণ। তাই ১০ শয্যার হাসপাতালে ১ হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া দ্বীপের সেনচুর, অবকাশ, ব্লু মেরিন হোটেল, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ও আবহাওয়া অফিসে ৪-৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে সরকারি হাসপাতালটিতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আলী আকবর (৯০) বলেন, ‘হঠাৎ করে ৭ নম্বর থেকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখা দেওয়ায় দ্বীপের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আমার এই বয়সে কোনো সময় আমি এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি। এখন জীবনের মায়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি দ্বীপের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে।
পরিবার-পরিজন, এলাকাবাসীসহ প্রায় ৩০০ মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছি।’ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছে আশ্রয় নেওয়া শিশুরা। এখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আসা মানুষের চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। শিশু-কিশোরেরা ভয়ে কান্নাকাটি করছে। আশ্রয় নেওয়া অনেকের কাছেই খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানিরও যথেষ্ট সংকট রয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, সোমবার রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। দমকা হাওয়ায় কিছু গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, বিদ্যুৎ না থাকায় তার খবর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্বীপের চারদিকে কোনো ধরনের বেড়িবাঁধ না থাকায় মানুষ বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘এখন চারদিকে শুধু বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই টেকনাফের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই দ্বীপে বসবাসরত লোকজনের জন্য খাবার ও বিশুদ্ধ পানি টেকনাফ থেকে আনতে হয়। হঠাৎ করে সিগন্যাল (বিপৎসংকেত) হওয়ায় তা অনেকে মজুত করতে পারেননি। তাই এখানে খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।’