কোন সম্ভাবনা নেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের:হাসিনা
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি : দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের স্থায়ী কমিশন আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবাসী এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে এমন কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে মধ্যবর্তী নির্বাচন করতে হবে। দেশ এখন উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে।”
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানোর জন্য বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাধারণ পরিষদের ৭১ তম অধিবেশনে তাঁর অংশগ্রহণকে সফল এবং ফলপ্রসু উল্লেখ করে উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, “এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সামগ্রিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমরা বাংলাদেশের অ্যাজেন্ডাগুলো জোরালো ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন ফোরামে আমাদের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে আমার বিশ্বাস।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ-সহ প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, মধ্যবর্তী নির্বাচন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের আসন্ন কাউন্সিলের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, “আপনারা জানেন আওয়ামী লিগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় দলের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (দলের) অনুষ্ঠিত হবে এবং এই কাউন্সিলররা নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সব নির্বাচন সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।” শেখ হাসিনা মনে করেন, এ নির্বাচনের সঙ্গে দলের কাউন্সিলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, “এটা আমাদের রুটিন কাজ এবং প্রতি ৩ বছরে দলীয় কাউন্সিল হয়।”
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি ও কতিপয় অন্য দলের বিরোধিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীদলের প্রবণতা হচ্ছে প্রতিটি কাজের বিরোধিতা করা। তবে এ ব্যাপারে ভয়ের কিছু নেই।”
হাসিনার দাবি, সংসদে বিরোধীদল যথাযথ ভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু যারা সংসদে নেই এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গত সাধারণ নির্বাচন বানচাল করতে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে এবং একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে, আপনি তাদের কাছ থেকে কোনও কিছু আশা করতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামাত জোট এ ধরনের অপরাধ করেছে। কিন্তু গত নির্বাচন বানচালে তারা তাদের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বেশ কয়েকটি কারণে চলতি বছর রাষ্ট্রপুঞ্জে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ইউরোপে চলতি শরণার্থী সঙ্কট ও অভিবাসন সমস্যা-সহ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর লক্ষাধিক আশ্রয় প্রতাশীর সমস্যা। দ্বিতীয়ত, মধ্য প্রাচ্যে আইএস-সহ বিশ্বব্যাপী জঙ্গী তৎপরতার উত্থান এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকা। তৃতীয়ত, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ সমর্থনের বিষয়টি এবং চতুর্থত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্বলিত ‘২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন-সহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির সমর্থনের বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট থাকা।
শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন সংকট, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরালো ভাবে তুলে ধরেছি।”