• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কোন পান্ডা’রা তুলে নিল এদের?


প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ২৯ আগস্ট ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৩ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  পুলিশ ও গোয়েন্দার বেশে এবার নেমেছে পান্ডা? এরা কারা? কি এদের পরিচয় তা বলতে পারছে না কেউ। না 3 kidnap-www.jatirkhantha.com.bdপুলিশ না বিশেষ শাখা গোয়েন্দারা। ভুক্তভোগীরা জনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ কে জানান, অনিরুদ্ধ কুমার রায়,শামীম আহমেদ ও সৈয়দ সাদাত পল্টনের খানা বাসমতি রেস্তোরাঁয় তাঁরা নয়জন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন।

খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর ওই রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখে এক ব্যক্তিকে টেনেহিচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। রেস্তোরাঁর সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই দৃশ্য। ২৩ আগস্ট দিনদুপুরে ঘটে যাওয়া এই অপহরণের ঘটনা মানুষকে অবাক ও আতঙ্কিত করেছে। কিন্তু এ নিয়ে বলার মতো কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে।

গত ছয় দিনে তিনজন ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে প্রকাশ্যে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে তাঁদের অপহরণ করা হয়। দুটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে আছে, কিন্তু কোনো কিনারা করতে পারছে না তারা।
এভাবে বিনা অভিযোগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে কেউ গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। এমনকি ধরে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারও কথা বলতে চায় না।
পরিস্থিতির নিরিখে মনে হয়েছে, সবাই চাপের মুখে আছেন।২২ আগস্ট বিকেলে বিমানবন্দর সড়কের বনানী ফ্লাইওভারের নিচে সাদা পোশাকের কয়েকজন একটি ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে এর আরোহী বিএনপির নেতা ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত আহমেদকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন।

ধরে নিয়ে যাওয়া সাদাত আহমেদ এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ শাহাবুদ্দীন। সাদাত আহমেদ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি। তিনি রাউজান থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন।

মামলাটির তদন্ত চলছে জানিয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ডিবিও কাজ করছে।’

২৩ আগস্ট ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় খানা বাসমতি রেস্তোরাঁর সামনে থেকে। রেস্তোরাঁটি বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে। এই রেস্তোরাঁ থেকে কয়েকটি ভবন পরেই আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। ২৩ আগস্ট দুপুরে অফিস থেকে বেরিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে তাঁকে ধরে নিয়ে যান সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ লোকেরা।

অপেক্ষমাণ সেই অপহরণকারীদের দুপুরের খাবার পরিবেশন করেছিলেন খানা বাসমতি রেস্তোরাঁর কর্মী মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রথমে দুজন আসেন। কিছুক্ষণ পর আসেন আরও সাতজন। লোকগুলো দুজনকে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন। তাঁদের ভাত-মাংস-সবজি পরিবেশন করা হয়।

হোটেলটির সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, একজন আকাশি ফুল শার্ট, আরেকজন আকাশি পোলো টিশার্ট পরে খাচ্ছেন। তাঁরা স্বাভাবিক গল্পগুজবও করছেন। অন্য সাতজন আরেক টেবিলে বসেন।

রেস্তোরাঁর ভেতরের নআরেকটি সিসি ক্যামেরায় ১টা ৪২ মিনিটে সামনের রাস্তা থেকে শামীমকে তুলে নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে। কাচের ভেতরে ক্যামেরার কিছুটা অস্পষ্ট দৃশ্যে দেখা যায় কয়েকজন লোক মিলে একজনকে টানাটানি করে মাইক্রোবাসে তুলে দরজা লাগিয়ে দেন। আর কয়েকজ লোক দেখছেন। এর মধ্যে টুপি মাথায় দেওয়া রেস্তোরাঁর নিরাপত্তাকর্মী খান বাহাদুরকেও দেখা যাচ্ছে।

খান বাহাদুর বলেন, স্যুট-টাই পরা একটা লোককে (শামীম) কিছু লোক টানাহ্যাঁচড়া করছিলেন।সেখানে লোকজন জমে যায়। পরে ধরে লোকগুলো টেনে তাঁকে মাইক্রোবাসে তোলেন। এ ঘটনায় শামীমের স্ত্রী শিল্পী আহমেদ পল্টন থানায় একটি জিডি করেন।
পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, এ বিষয়ে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো মামলাও হয়নি।

তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ‘সম্ভবত যারা তাঁকে ধরে নিয়েছে, তারা আমাদের নাগালের বাইরের লোক।’ আইএফআইসি ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও শামীমের সহকর্মী আসাদুজ্জামান বলেন, কারা, কেন তাঁকে ধরে নিয়ে গেল, সে বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। শামীমের পরিবারই মামলা ও পুলিশি বিষয়গুলো দেখভাল করছে।

ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ৭২ গুলশান এভিনিউতে ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে ২৭ আগস্ট ধরে নেওয়া হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের কার্যালয় থেকে ৯০ মিটার দূরেই গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বর। গুলশান-১-এ সিগন্যাল পড়লেই এই রাস্তার গাড়ির সারি ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত চলে আসে। ব্যাংকের সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী ফকরুল বলেন, তিনি দেখেননি তবে শুনেছেন এখান থেকে এক সাহেবকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারদলীয় একজন সাংসদের সঙ্গে অংশীদারের ভিত্তিতে তাঁর ব্যবসা ছিল। সম্প্রতি সেই ব্যবসা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে ব্যবসার অংশীদারত্ব ভেঙে যায়। তদন্তে বিষয়টিকে সামনে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ঘটনারও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। তবে কোনো পেশাদার অপরাধী চক্র তাঁকে ধরে নিয়ে যায়নি বলেই মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অপহরণের ধরন-ধারণ দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরই এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে। আর অপহরণকারীরা অপহরণের সময় নিজেদের একটি বিশেষ সংস্থার সদস্য হিসেবেও দাবি করেছিলেন।

জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ব্যবসায়িক ঝামেলার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এ ঘটনায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় গুলশান-১-এ দাঁড়িয়ে থাকা রুপালি রঙের একটি মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন লোক তাকে তুলে নেন। অনিরুদ্ধর গাড়িচালক শাহ আলমসহ অন্যরা পুরো বিষয়টি দেখেছেন এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের সিসি টিভি ক্যামেরায় এই ফুটেজ ধরা পড়েছে।

অনিরুদ্ধর স্ত্রী শাশ্বতী রায় এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি বলেন, একটি ঋণের বিষয়ে কথা বলতে ওই সময় ব্যাংকে গিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ। কাউকে সন্দেহ করেন কি না, জানতে চাইলে শাশ্বতী কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। আমাদের ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে…। আপনারা কাইন্ডলি আমার ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও কিছু করুন। আমি পুলিশ ভাইদেরও সে কথা বলেছি।’

এ ব্যাপারে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।