• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

কোটি কোটি টাকা আসছে ফারাহ-এজাজের একাউন্টে


প্রকাশিত: ৬:৫৭ পিএম, ১৬ নভেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪১ বার

 

এস রহমান : কোটি কোটি টাকা আসছে ফারাহ ও এজাজের একাউন্টে।অনুসন্ধানে নেমে গোয়েন্দারা এর সত্যতা 88পেয়েছেন।একই সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে ফারাহ ও এজাজ দম্পতির বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে পুলিশের পৃথক তিনটি সংস্থা।

আলোচিত এই দম্পতি হলো এজাজ ইসলাম ও তার স্ত্রী ফারাহ শারমিন। এজাজ গ্রামীণফোনের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত। আর তার স্ত্রী প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার অপারেশন হিসেবে রাজধানীর সাত মসজিদ রোড শাখায় কর্মরত রয়েছেন।

এছাড়া, ফারাহ শারমিনের আরেক পরিচয় হলো, তিনি আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্যতম পলাতক আসামি সাবেক শিল্প সচিব নূরুল আমীনের মেয়ে। এজাজ ও ফারাহ শারমিন দম্পতির বিরুদ্ধে প্রায় তিন কোটি টাকা জঙ্গি অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ উঠেছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলায়ের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট, পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি ও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি এই অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে।

সিটির অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার ওপর প্রাথমিক অনুসন্ধানের দায়িত্ব ছিল। আমি অনুসন্ধান করে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি।’ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি কনফিডেন্সিয়াল ডকুমেন্টস,এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।’

সূত্রে জানা গেছে, এজাজ ইসলাম ও ফারাহ শারমিনের নামে প্রাইম ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় একটি যৌথ একাউন্ট রয়েছে। ২০১২ সালের ১ আগস্ট ওই হিসাবে পর্যায়ক্রমে দুই কোটি, এক কোটি, তিন কোটি করে একদিনেই মোট ছয় কোটি টাকা জমা হয়। পরেরদিন ২ আগস্ট ওই হিসাব থেকে দুই কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়।

ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর তিন বারে এক কোটি টাকা করে মোট তিন কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। একই দিনে আবার ওই হিসাবে পুনরায় এক কোটি টাকা জমা হয় এবং আবারও তিন কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া,ফারাহ শারমিনের নামে প্রাইম ব্যাংক মতিঝিল শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। যার নম্বর ১০৪২১০৫০০৪৬৯৪২।ওই হিসাব থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

অনুসন্ধানকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, এজাজ ইসলাম, তার স্ত্রী ফারাহ শারমিন,এজাজের ভাই ইফতেখায়রুল ইসলাম, তার স্ত্রী গুল-ই-জান্নাত, এজাজের মা খোদেজা নার্গিস, বোন ফারহানা ইসলাম এবং আব্দুল হাকিম নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন মেসার্স জোহা অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের পরিমাণ ৫০ হাজার। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই তারা নারায়ণগঞ্জের খানপুরের ১৮ নম্বর মোকরবা রোডের বাসিন্দা মাসুদুজ্জামান ওরফে মাসুদের কাছে ৩৭শ’ শেয়ার বিক্রির চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। যার দলিল নম্বর ৬৫৩৬। চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের দিনে ইফতেখায়রুল ইসলামের ১৫শ’ শেয়ার, সৈয়দ এজাজ ইসলামের ১৫শ’ শেয়ার এবং বেগম খোদেজা নার্গিসের ৭ হাজার ৭৩০টি শেয়ার, অর্থাৎ ১০ হাজার ৭৩০টি শেয়ার বিক্রি বাবদ ১৫ কোটি টাকা গ্রহণ করেন।

সৈয়দ এজাজ ইসলামের মালিকানাধীন ছিল ১৫শ’ শেয়ার। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৭৯ টাকা ৫০ পয়সা। ওই হিসাবে এজাজ ইসলামের বিক্রি করা শেয়ারের দাম হয় দুই কোটি নয় লাখ উনসত্তর হাজার ২৪৬ টাকা। কিন্তু এজাজ ইসলাম ও ফারাহ শারমিন তাদের যৌথ অ্যাকাউন্টে তিনটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ছয় কোটি টাকা গ্রহণ করেন।

পে-অর্ডারগুলোর মধ্যে ১১৪৮৫০০ নম্বরের পে-অর্ডারে তিন কোটি, ১১৪৮৫০১ নম্বরের পে-অর্ডারে দুই কোটি টাকা ও ১১৪৮৫০২ নম্বর পে-অর্ডারে এক কোটি টাকা জমা হয়।তথ্য মতে, এই টাকার মধ্যে এজাজ ইসলাম ও ফারাহ শারমিন দম্পতি ২০১২ সালের ২ আগস্ট প্রাইম ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় দুই কোটি টাকার একটি এফডিআর করেন।

পরবর্তীতে তারা গুলশান-২ এর ৫০ নম্বর সড়কের ১৫/বি নম্বর প্লটের জনৈক খালেদ আরিফের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের বায়না বাবদ প্রথমে তিন কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করেন তারা। পরবর্তীতে এক কোটি টাকা করে আরও তিনটি পে-অর্ডার আরিফের নামে ইস্যু করা হয়।

সেই পে-অর্ডার বাতিল করে আবার টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা হয় এবং পুনরায় তিন কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করেন এজাজ ও শারমিন দম্পতি।কিন্তু অনুসন্ধানকারী সংস্থা তাদের ফ্ল্যাটের বায়নাপত্রের দলিল পর্যালোচনা করে দেখতে পায় যে, খালেদ আরিফকে এক কোটি টাকা করে মোট তিনটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে। যা এজাজ ও শারমিনের দেওয়া বিবৃতি এবং তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অনুসন্ধানকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদেও তারা এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

সূত্র জানায়, তদন্তকারী সংস্থার অনুসন্ধানে এজাজ ইসলামের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং ফারাহ শারমিনের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং পাকিস্তানের জম্মু ও কাশ্মিরে যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে। তবে এসব যোগাযোগের ক্ষেত্রে এজাজ ইসলাম তার পুরনো বন্ধু ও সহকর্মীদের কথা বলেছেন। আর ফারাহ শারমিন আমেরিকা ও কানাডায় তার মামাদের সঙ্গে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয় বলে দাবি করেছেন।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফারাহ শারমিন তার স্বামী সৈয়দ এজাজ ইসলাম ও তার পিতা নূরুল আমীনের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তির হিসাব নেওয়ার পাশাপাশি তাদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি আমলে নিয়ে, প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া,পাকিস্তান হাইকমিশন এবং দেশি-বিদেশি কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ফারাহ শারমিন এবং তার স্বামী সৈয়দ এজাজের বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে জানতে গ্রামীণ ফোনের উপ-পরিচালক সৈয়দ এজাজ ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বিষয়টি উল্লেখ করে তার মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি। অপরদিকে, তার স্ত্রী ফারাহ শারমিনের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।