কে হচ্ছেন শেখ হাসিনার সিপাহসালার?
শফিক রহমান : আওয়ামী লীগের বহুল কাংখিত কাউন্সিলে কে হচ্ছেন শেখ হাসিনার সিপাহসালার? সারাদেশে টক অব দ্যা কান্ট্রি এখন এটি। রাজধানীতে চলছে সাজ সাজ রব।সবার প্রশ্ন একটাই কে হচ্ছেন শেখ হাসিনার সিপাহসালার?
রাত পোহালেই আওয়ামী লীগের বহুল আকাংখিত ২০ তম কাউন্সিল। এই কাউন্সিলেই নির্বাচিত হবেন আওয়ামী লীগের সেকেন্ডম্যান কে হচ্ছেন। ভোট দেবেন কাউন্সিলররা। কাউন্সিল উপলক্ষ্যে ব্যাপক সাজসজ্জা করা হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে।
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় কাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন।নেতারা বলছেন, এই প্রথমবারের মতো এত জাঁকজমকভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে দলটির সব জেলা কার্যালয়ও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
এবারের কাউন্সিলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মি. ক্লিনম্যান ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ’ই প্রথম মি. ক্লিনম্যান ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল-তাঁর সাধারন সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে।সেটাই আজ ফলতে যাচ্ছে।
বিশেষ করে বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠানোর পর এই আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।ওবায়দুল কাদের শিবিরেও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে সৈয়দ আশরাফকে ছাড়িয়ে ওবায়দুল কাদের এগিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির জন্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নাম গত কয়েকমাস ধরে আলোচনায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি আগে থেকে অনেকটাই নির্ধারিত থাকার কারণে এ পদ নিয়ে নেতাকর্মী বা অন্যদের আকর্ষণ থাকে না। এ কারণে দলের প্রতিটি সম্মেলনেই সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের জন্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, এর আগে ৩টি সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যে কয়েকজনের নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তারা শুনে আসছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের ছিলেন অন্যতম। ২০০২ সালে তিনি এ পদের প্রার্থীও হয়েছিলেন। তবে ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দলের ভূমিকার প্রশ্নে ২০০৯ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন সেটা আগেভাগেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল।
২০১২ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফের পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের নাম বেশি আলোচনায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফই সেই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ পদের দায়িত্ব পালন করছেন।সৈয়দ আশরাফের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। সৎ রাজনীতিক হিসেবেও কর্মীদের কাছে রয়েছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা।
কিন্তু তাঁকে অনেক সময় দলের কাজে পাওয়া যায় না এ অপবাদ রয়েছে।সে প্রেক্ষাপটে এবার নেতা কর্মীরা নতুন মুখ দেখতে চাচ্ছেন। কারণ, আগামী দিনের প্রেক্ষাপটে একজন ডাইন্যামিক নেতা দলের জন্যে খুবই প্রয়োজন। সে জায়গায় চলে আসে ওবায়দুল কাদেরের নাম।
তবে তাঁর নিন্দুকেরা বলেন, সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বরাবরের মতো আলোচনায় থাকা ওবায়দুল কাদের বিগত কিছুদিন ধরে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন। আসলে এটা সঠিক ছিল না। অনেকে বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদটি পাবেন না—এমনটা তিনি নিজেও মনে করতেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার আভাসও দেন। ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকসহ কোনও দলের অন্য কোনও পদে প্রার্থী হবেন না জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সবাই নেত্রীর ওপর আস্থাশীল।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন যখন হয় আমি মাঝে-মাঝে বিব্রত হই, লজ্জাও পাই। মনে অনেক প্রশ্নও জাগে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আলাপ-আলোচনা আসে, পত্রিকায় ছবি বের হয়। আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি আওয়ামী লীগের কোনও পদে প্রার্থী নই।
এ প্রেক্ষাপটে বুধবার পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে বলেন বলে ওবায়দুল কাদের তার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার কাছে দাবি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণভবনে সাক্ষাৎ ও তার দাবির পর আওয়ামী লীগের মধ্যকার হিসাব-নিকাশও অনেকটা পাল্টে গেছে। ওবায়দুল কাদের এবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন—এমন খবর দলের নেতাকর্মীদের মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওবায়দুল কাদেরকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে।
ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জাতিরকন্ঠকে জানায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদেরের কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ খুশি। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি ও বিভিন্ন স্থানে তার আকস্মিক ভিজিটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়েও মন্ত্রণালয় পরিচালনায় ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পর ওবায়দুল কাদের আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতির খবর নিতে যান তিনি। সেখানে তিনি উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার কাছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর সর্বশেষ অবস্থানের কথা জানান।
তিনি জানান, নেত্রী তাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কাউন্সিলের সম্মতি সাপেক্ষে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন এমন দাবিও করেছেন তিনি।এদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা সম্মেলনের কাউন্সিলরাই ঠিক করবেন।
পদপদবি না পেলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।সাধারণ সম্পাদক পদে ওয়াদুল কাদের নাম আলোচনায় আসার খবর শুনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে যান গিয়েছিলেন বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে।