কে ধরবেন ‘ঘড়ি’র হাল!
এস রহমান : ‘ঘড়ি’র হাল কে ধরবেন ? এখন তা নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা। যদিও এটা সময়ই বলে দেবে এবং এবার তো ঘড়ির হাল থাকবে রাজনৈতিক দলীয় প্রতিক নৌকার হাতে!! ২০১৫ সালের ভোট হয়েছিল নির্দলীয় ভাবেই। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থনে উত্তর অংশের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল। তবে এখন ব্যবস্থা পাল্টে গেছে, এবার নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে।
কিন্তু যিনি ঘড়ির মার্কার জনক ছিলেন, যিনি সময়কে সঠিক মূল্যে দিয়ে গিয়েছিলেন, যিনি জনগনের স্বার্থ দেখেছিলেন, নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব খুঁজছেন উত্তরের মানুষ। যিনি হবেন মেয়র আনিসুলের মতো। শোক কে শক্তিতে পরিণত করে মেয়র আনিসুলের মতো ব্যক্তিত্ব খুঁজে বের করতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্ত্বিত্বরা। আনিসুলের শোক কাটিয়ে বাছতে হবে নতুন মেয়র। কে ধরবেন উত্তরের হাল! তা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা।
২০১৫ সালের পর এবার নগরবাসী কাকে বেছে নেবে, সেই বিষয়টি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। কারণ তারাই প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। মেয়র আনিসুলের মৃত্যুর পর মানুষের প্রতিক্রিয়ায় বোঝা গেছে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে হাজারো শোকবার্তা। সেই সঙ্গে মেয়রের শুরু করা উদ্যোগগুলো যেন থমকে না যায় সে জন্যও আকুতি জানাচ্ছেন নগরবাসী। মেয়রকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে এক তরুণও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এই বিষয়টির প্রতি নজর রাখার অনুরোধ করেছেন।
গত আগস্টে যুক্তরাজ্যে মেয়র হাসপাতালে ভর্তির সপ্তাহ তিনেক পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্যানেল মেয়র হিসেবে তিন জনের নাম ঠিক করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ওসমান গণি এখন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।তবে আনিসুল হক মারা যাওয়ায় এখন প্যানেল মেয়র দিকে বাকি মেয়াদ পার করা যাবে না। ২০১৫ সালের ১০ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনিসুল হক। সেই হিসাবে আড়াই বছর মেয়াদ থাকতেই পদটি শূন্য করে তিনি চিরঘুমে চলে গেছেন তিনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী আনিসুলের বাকি সময়ের জন্য মেয়র পদে নির্বাচন করতে হবে।
২০০৯ সালে করা স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন এর ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে মেয়র বা কোন কাউন্সিলরের পদ শূন্য হলে তার ৯০ দিনের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে এবং যিনি এই পদে নির্বাচিত হবেন তিনিই করপোরেশনের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য বহাল থাকবেন।কী কী কারণে পদ শূন্য হয়, সেটিও আইনে বলা আছে।
আইন অনুযায়ী কেউ যদি মেয়র বা কাউন্সিলর হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন বা হলফনামা দিতে না পারেন, কেউ যদি পদত্যাগ করেন, কেউ যদি অপসারিত হন বা কেউ যদি মারা যান, তাহলেও এই পদ শূন্য হয়।তবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী এই নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিজে থেকে নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে না। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে অনুরোধ পাঠানো হবে এবং তারা ভোটের উদ্যোগ নেবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন জাতিরকন্ঠ কে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী কোনো মেয়র মারা গেলে সেই আসন শূন্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সেখানে তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন মেয়র নির্ধারণ করার বিধান আছে।’তবে যেহেতু মেয়র সবে মারা গেছেন, তাই এখনই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না মন্ত্রণালয়। কিছুদিন অপেক্ষা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তবে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাদেরকে জানিয়ে দিলেই আমরা ভোটের ব্যবস্থা করব। তাদের নির্দেশনা আসলেই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে আমাদের সব সময় প্রস্তুতি থাকে।’ গত ২৯ জুলাই নাতিকে দেখতে লন্ডন গিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। ৪ আগস্ট হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রায় চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত মঙ্গলবার মেয়র আনিসুলকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
আর বৃহস্পতিবার তিনি ছেড়ে যান পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। শনিবার তার মরদেহ ঢাকায় আনা হলে লাখো নগরবাসী তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কার্পন্য করেননি।এদিকে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ঢাকার পরবর্তী মেয়র হিসেবে আনিসুল হকের মতোই কাউকে চান তারা। কিন্তু দলগুলো কী ভাবছে? এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুইজন নেতা বলেছেন, সবে আনিসুল হক মারা গেছেন, এখনও তিন মাস সময় আছে। এ নিয়ে এখনও দলের ভেতর কোনো আলোচনা হয়নি। আর তাড়াহুড়ো করলে জনগণ বিষয়টিকে ভালো চোখে নাও দেখতে পারে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা সবসময় স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলাম। আগামীতে নির্বাচন কমিশন ও সরকার যদি সেই আস্থার জায়গা তৈরী করতে পারে তখন আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যাবো।তিনি বলেন, যেহেতু ঢাকা উত্তরের মেয়র কেবল মারা গেলেন সেহেতু যখন সময় আসবে তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।