• রোববার , ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

কেন প্রাণের বই মেলা !


প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ২৯ জানুয়ারী ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫৪ বার

1শামসুজ্জামান খান :   লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের আনন্দের বইমেলা শুরু হচ্ছে আবারও। বই আমাদের খুব প্রিয় সঙ্গী। জ্ঞান, আনন্দ ও বিনোদনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বইয়ের ইতিহাস খুব দীর্ঘদিনের নয়।

আজ থেকে পাঁচ-ছয় শ বছর (১৪৪০-৫০) আগে জার্মানিতে যখন জোহানেস গুটেনবার্গ স্থানান্তরযোগ্য টাইপ বা অক্ষর উদ্ভাবন করলেন, তখন থেকেই শুরু হলো বইয়ের অস্তিত্ব। মানব সভ্যতার ইতিহাসে জার্মানির এই অবদান বিশ্বের জ্ঞানজগতের বিশাল বিস্তার ঘটিয়েছে। আসলে ওই আবিষ্কার বিশ্বে প্রযুক্তিগত অর্জনের দিক এবং সাংস্কৃতিক এক বিপ্লবও সংঘটিত করেছে। এর আগে বই আকারে যা ছিল, তা নানা উপাদান থেকে গঠিত। তালপাতা অথবা তুলট কাগজসহ আরও নানা উপাদানে বই বা বই আকারে একধরনের পাণ্ডুলিপির অস্তিত্ব ছিল। কখনো কখনো ‘বই’ আকারের এসব হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি বিত্তশালী বা জ্ঞানপিপাসুদের বাড়িতে বয়ে নিয়ে পড়ে শোনাতেন সেকালের শিক্ষিত মানুষ।

এর বিনিময়ে তাঁরা যে অর্থ বা দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতেন, তাতেই তাঁদের সাংসারিক ব্যয় নির্ভর করত। কখনো এই পাণ্ডুলিপির লেখককে খুঁজে পাওয়া যেত, কখনোবা পাণ্ডুলিপিটি কার, সেটি আবিষ্কার করা ছিল দুরূহ। লিপিকরেরাও বই নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ফেরি করে জ্ঞান বিতরণ করতেন। বিনিময়ে জুটত রেস্ত। বইসংক্রান্ত এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশের বই এবং এর প্রচারের সূচনাপর্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। পশ্চিমা বিশ্বেও এমনতর বিষয় ছিল আর গুহাচিত্রে লেখনের চিহ্নটাও পরবর্তীকালে ভালোমতেই পড়া যেত।

কিন্তু প্রাথমিক এসব ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিল গুটেনবার্গের অক্ষর আবিষ্কার। ফলে বই আর খুব সীমিতসংখ্যক লোকের মধ্যে আবদ্ধ রইল না। সারা দেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ল মুদ্রিত বই। এটি এক বিশাল বিপ্লব। প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের জন্য বই হলো সহজলভ্য। স্কুল-কলেজে শিক্ষাব্যবস্থাও হয়ে উঠল বইনির্ভর। পৃথিবীর চেহারাই বদলে গেল এতে। জ্ঞানচর্চা ও তার অনুশীলন সহজলভ্য হওয়ায় সর্বব্যাপী জ্ঞানের দ্বার উদ্ঘাটন এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশেরও সূচনা ঘটল মুদ্রিত বইয়ের কল্যাণে।

দু-একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যায়। গুটেনবার্গের আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডে স্কুলের সংখ্যা তিরিশের কিছু কম থেকে তিন শ-তে উন্নীত হলো। ১৪৫০ সালে গোটা ইউরোপে বইয়ের সংখ্যা এক হাজার থেকে উন্নীত হলো নয় লাখে। একে নিশ্চিতভাবেই একটি সামগ্রিক সাংস্কৃতিক জাগরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। আমাদের দেশেও গত দু শ বছরে বাংলা টাইপ আবিষ্কারের পর বাংলা বইয়ের এক বিশাল জগতের উন্মোচন ঘটেছে। সে ইতিহাস কম-বেশি শিক্ষিতজনেরই জানা।

বইমেলার ইতিহাস অনুসন্ধান করলেও দেখা যায়, এর ইতিহাসও বইমুদ্রণের ইতিহাসেরই প্রায় সমকালীন। ইউরোপের ফ্রান্স, গ্রিস, বলগ্না, লিঁও, প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টে বইমেলা খুবই প্রাচীন। ইউরোপে বইকে দেখা হয়েছে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক পণ্য ও সাংস্কৃতিক উপাদান হিসেবে। সে কারণেই এর প্রচার, প্রসার ও বাজার সৃষ্টির জন্য ওই সব দেশে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বই-বিক্রেতারা বসেছে নানা জায়গায়। বই বিকিকিনির এই আয়োজনকেই একালে চিহ্নিত করা হয়েছে বইমেলা হিসেবে। বইমেলা এখন গোটা বিশ্বের এক জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানানুশীলনের কেন্দ্রও বটে।

এতক্ষণ আমরা ইউরোপের কথাই বলেছি। কারণ, ইউরোপে বই প্রকাশ এবং বইমেলার ইতিহাস অনেক বেশি ধারাক্রমিক ও সুবিন্যস্ত। তবে বইয়ের কেন্দ্র হিসেবে প্রাচীন মিসর, চীন আর ভারতের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। এই সব দেশে বই প্রকাশ, বই প্রকাশের উপাদান কাগজ উৎপাদনের ইতিহাস খুব প্রাচীন। ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশেও—একদিকে ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতায় ব্রিটিশ মিশনারিদের প্রচেষ্টায় যেমন আধুনিক মুদ্রিত বইয়ের সূচনা, তেমনি পাশাপাশি বটতলার বইয়ের বিশাল বিস্তারের কথাও আমাদের জানা। বাঙালি একসময় বুঁদ হয়ে থাকত বটতলার বই নিয়ে।

অন্যদিকে ইংরেজ মিশনারি ও সিভিলিয়ানদের প্রয়াসের ফলে নব্যশিক্ষিত বাঙালি আধুনিক বই-পুকের দিকে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বটতলার বইকে আমরা দেখতে পারি জনপ্রিয় বা পপুলার কালচারের বিস্তার হিসেবে। অন্যদিকে ইউরোপীয়দের এ দেশে পুস্তক প্রকাশের উদ্যোগকে দেখা যেতে পারে ‘এলিটিস্ট’ করার প্রয়াস হিসেবে। কারণ নব্যশিক্ষিত বাঙালি ধনিক ও রুচিশীল পরিবারে এই এলিটিস্ট বা নাগরিক সাংস্কৃতিক উপাদানের একটি প্রধান অঙ্গ হিসেবে গ্রন্থপাঠ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এবার বইমেলা নিয়ে আরও কিছুটা বিস্তারে যাওয়া যেতে পারে। ফ্রাঙ্কফুর্ট বা লিপজিগ প্যারিস অথবা লন্ডনের বইমেলা ছাড়াও জেরুজালেম, টোকিও, সিডনি, ম্যানিলা, বুয়েনস এইরেস, নতুন দিল্লি বা কলকাতার বইমেলাও এখন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলাও এখন বিশ্বে দীর্ঘকালব্যাপী আয়োজন হিসেবে অনন্যতা লাভ করেছে। ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের বইমেলা প্রধানত বইয়ের বাণিজ্যিক মেলা। এই সব মেলায় প্রকাশকেরা লেখকদের সঙ্গে বই প্রকাশের চুক্তি সম্পন্ন করে থাকেন।

বিভিন্ন প্রকাশকের এজেন্টরাও এসব মেলায় উপস্থিত থেকে এ ধরনের কাজই করেন। দিল্লির বইমেলা এখন অনেকটাই মিশ্র মেলা। এখানে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্য যেমন বিদ্যমান, তেমনি বইয়ের সঙ্গে পাঠকদের সরাসরি কেনাবেচার সম্পর্কও রয়েছে। কলকাতা বইমেলাতেও দিল্লির মতো বিশাল বিশাল প্যাভিলিয়নে নানা প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের বৈচিত্র্যময় সমাহার দেখা যায়। একই সঙ্গে এই মেলায় ছোটখাটো প্রকাশকেরাও তাঁদের কায়দায় এমনকি হাটবাজারে মানুষ যেভাবে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে, তেমনিভাবে বসেন; আবার এঁদের পাশে ছোট কাগজের অগণন বৈচিত্র্যময় সম্ভার নিয়ে বসেন যশপ্রার্থী তরুণ লিখিয়ে-কর্মী-বুদ্ধিজীবী-সমালোচক।

পৃথিবীতে এখন পঞ্চাশটির মতো আন্তর্জাতিক বইমেলা হয়। গত তিন দশকে এশিয়া প্যাসিফিক দেশসমূহেও আন্তর্জাতিক বইমেলার সূচনা ঘটেছে। তবে আন্তর্জাতিক বইমেলা আমরা কাকে বলব? এ বিষয়ে একটি মোটামুটি স্বীকৃত সংজ্ঞা হলো, যদি কোনো বইমেলার প্রধান কাজই হয় নানান দেশের লেখকদের বইপত্র প্রকাশের স্বত্ব কেনাবেচার চুক্তি; পাশাপাশি বইয়ের বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সম্পন্ন করা হলে তাকে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা বলা যেতে পারে।

এর সঙ্গে হয়তো পৃথিবীবিখ্যাত কোনো লেখককে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে জ্ঞানের কোনো বিষয়ে বক্তৃতার জন্য। এবং তার সঙ্গে আয়োজন করা যেতে পারে ছোটখাটো সেমিনারও। এই সব শর্তের আলোকে দেখলে ফ্রাঙ্কফুর্ট, বলগ্নার শিশুদের জন্য আয়োজিত বইমেলা বা লন্ডন বুক ফেয়ারকেই প্রকৃত আন্তর্জাতিক বইমেলা বলা যেতে পারে।
এখন বাংলা একাডেমির বইমেলা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। বাংলা একাডেমির ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শুরু হয়েছে ১৯৮৪ সালে। এই মেলার আয়োজক বাঙালির জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমি।

এই ইতিহাসের কিছুটা প্রাক্-ইতিহাসও আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করা হয়। এতে ভারতের দু-একটি প্রকাশনা সংস্থা, বাংলাদেশের কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও ঢাকায় অবস্থিত কয়েকটি দূতাবাস অংশ নেয়। এই মেলার মূল আয়োজক ছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তৎকালীন প্রধান সরদার জয়েনউদ্দীন। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। ভারতের বিখ্যাত লেখক মুলক্রাজ আনন্দ, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ এসেছিলেন ওই মেলায়।

এই মেলাকে আন্তর্জাতিক বলা হলেও ওপরে আন্তর্জাতিক মেলার যে সংজ্ঞা আমরা দিয়েছি, তাতে একে আন্তর্জাতিক বইমেলা বলা যায় না। তবু এর গুরুত্ব অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে বইমেলার পথিকৃৎ হিসেবে আমরা এই মেলাটিকেই দেখে থাকি। এরপরে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের বইপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মুক্তধারার শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা, স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী, বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলাম প্রমুখ। কিন্তু তখনো বাংলাদেশে বইমেলা কোনো সুস্পষ্ট রূপ পায়নি।

১৯৮৩-তে একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক মনজুরে মওলা এই প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আয়োজনের সূত্রপাত করেন। কিন্তু সে বছর স্বৈরাচারী সরকার একটি ছাত্রমিছিলে ট্রাক তুলে দেওয়ায় মেলাটি আর ওই বছর হতে পারেনি। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ থেকে যথারীতি বর্তমান ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র সূচনা। প্রথমবার আয়োজনে মাত্র পঁচিশ-তিরিশটি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়।

সেই মেলা এখন বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে। এই মেলা এখন শুধু বাংলা একাডেমিতে নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বাংলা একাডেমির ষাট বছর পূর্তির হীরকজয়ন্তীকে এবারের গ্রন্থমেলার ‘মূল থিম’ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ বর্গফুট এলাকা নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় চার শ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে এবারের মেলায়। বড় প্রকাশকেরা ১৫টি প্যাভিলিয়নে তাঁদের বইয়ের পসরা সাজাবেন।

এ ছাড়া চার ইউনিটের ১৮টি স্টল, তিন ইউনিটের ৩৮টি, দুই ইউনিটের ১০৪টি এবং এক ইউনিটের ১৩৮টি স্টল নিয়ে মেলাটির বিন্যাস। মেলার আয়োজনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে, বিন্যাসে আনা হয়েছে নানা রকম বৈচিত্র্য, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিখুঁত করার চেষ্টা করা হয়েছে; এবং আলো ও নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ারের সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্টসংখ্যক গেটও নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই বছরের মেলাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে; বই বিক্রিও অন্যান্য বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ছাড়া ৩ ফেব্রুয়ারি সুইডেন, মরক্কো, যুক্তরাজ্য, স্লোভাকিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশের কবিদের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।

বাংলা একাডেমির বইমেলাটি ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের মানুষের গভীর আবেগ, ভালোবাসা ও গ্রন্থপ্রীতি যুক্ত হয়ে মেলাটি ধীরে ধীরে বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণ আর রুচি নির্মাণের এক অনন্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। প্রতিবছর আবালবৃদ্ধবনিতা থেকে শুরু করে তরুণ-যুবারা বিপুল হারে এই মেলায় আসেন, বই কেনেন, বন্ধুর সান্নিধ্যে আড্ডা দেন এবং জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে থাকেন।
আমাদের এই বইমেলাটি অন্য কোনো বইমেলার মতো নয়, একেবারেই বাঙালির ভাষাপ্রীতি, ভাষার জন্য সংগ্রাম ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠার স্মারক হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক মানোন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতেও মেলাটির গুরুত্ব অসাধারণ।

সে জন্যই আমাদের প্রত্যাশা, এই মেলায় অঢেল বই প্রকাশিত হলেও মানসম্পন্ন বইয়ের যে অভাব রয়েছে, তরুণ পাঠকেরা সে বিষয়ে সচেতন হবেন; তাঁরা ভালো বই প্রকাশে প্রকাশকদের উৎসাহিত করবেন; দেখেশুনে গুণগত মানে উন্নত ভালো বই অধিক পরিমাণে কিনবেন। ভালো বইয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ যদি বেশি থাকে তাহলে প্রকাশকেরা নিম্নমানের বই প্রকাশে যেমন উৎসাহিত হবেন না, তেমনি যাঁরা প্রযত্নলালিত অনুশীলন ছাড়া কোনোক্রমে যা-একটা-কিছু লিখে বই আকারে প্রকাশ করেন—তাঁরাও বই প্রকাশের সহজ সুযোগ পাবেন না।

আমরা চাই গুণগত মানে উন্নত বই এবং এই ধারার বিকাশের মধ্য দিয়ে বছরে অন্তত পাঁচ-ছয়টি ভালো বই প্রকাশে প্রকাশকদের উৎসাহিত করতে। বাংলা একাডেমি এ ব্যাপারে এ বছর একটি গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং বইমেলায় স্টল বরাদ্দের ব্যাপারেও মানসম্পন্ন প্রকাশকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তা ছাড়া নিম্নমানের বই প্রকাশ প্রতিরোধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে একাডেমি এখন থেকেই সচেতন হতে শুরু করেছে।
বাঙালির উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক বাংলা একাডেমির বইমেলা। মানবিক চৈতন্য, শুভবুদ্ধি ও একটি আলোকিত সমাজ গঠনই এই মেলার লক্ষ্য।
শামসুজ্জামান খান: মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি