• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কৃত্রিম চিনি জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘আশঙ্কাজনক’


প্রকাশিত: ১১:২০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২০৯ বার

 

 

Suger-www.jatirkhantha.com.bdশফিক আজিজি:
‘এনএএস’ বা কৃত্রিম চিনিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘আশঙ্কাজনক’ বলে অভিহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষক-গবেষকেরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘এনএসএস’ বা ‘নন-ক্যালরিফিক আর্টিফিশিয়াল সুইটনার’ প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, কৃত্রিম চিনি নিয়ে আগের গবেষণাগুলোতে মিশ্র ফল দেখতে পেয়েছিলেন নানা দেশের বিজ্ঞানীরা। কোনো কোনো গবেষণায় এটা ওজন কমানো এবং গ্লুকোজ সহিষ্ণুতার জন্য ভালো হিসেবে দেখা গেলেও অন্যান্য গবেষণায় বিপরীত ফলই পেয়েছেন তাঁরা।

আর ইজরায়েলি বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাকে ‘স্বাগত’ জানালেও আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা না চালিয়ে এখনই ‘এনএএস’ বা কৃত্রিম চিনিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘আশঙ্কাজনক’ বলে অভিহিত না করার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিষয়ের বিশ্লেষক-গবেষকেরা।

মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাবে কিন্তু শর্করার পরিমাণ বাড়বে না—এমন কথা বলেই নানা খাবারে দিন দিন কৃত্রিম চিনির ব্যবহার বাড়ছে। এই কৃত্রিম চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেও সার্টিফিকেট দিচ্ছেন অনেকেই। কৃত্রিম চিনি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকেরা। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস এ বিষয়ে জানিয়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞই ‘টাইপ-টু’ ডায়াবেটিসের মতো মহামারির আকার ধারণ করা রোগ এবং গ্লুকোজ-অসহিষ্ণুতায় আক্রান্ত হয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বাsuger-1-www.jatirkhantha.com.bd ‘প্রি-ডায়াবেটিক কন্ডিশন’-এর ক্ষেত্রেও কৃত্রিম চিনি খাওয়ার পরামর্শই দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া দুনিয়াজুড়েই ডায়েট সোডা, বিভিন্ন ধরনের সেরিয়াল এবং দই-মিষ্টি-কেকসহ ডেজার্ট-জাতীয় খাবারে এই কৃত্রিম চিনির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই।

এ পরিস্থিতিকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলি গবেষকেরা। ইসরায়েলের ভাইজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানী এরান এলিয়ানভ ও এরান সেগালের সম্পাদনায় গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ক্যালরি গ্রহণ কমানো এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ না বাড়িয়ে মিষ্টি স্বাদ বজায় রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের খাবারদাবারে কৃত্রিম চিনির ব্যবহার চালু করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আসলে যে মহামারি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এটা চালু করা হয়েছে, বাস্তবে সেই রোগের ঝুঁকিই বাড়িয়ে দিতে পারে এনএএস বা কৃত্রিম চিনি।

কৃত্রিম চিনির ক্ষতিকর এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে গবেষকেরা বলেছেন, জিভে মিষ্টি স্বাদ রেখে গিয়ে এনএএস মলিকিউলগুলো শোষিত না হয়ে সরাসরি তা অন্ত্রের ভেতরে চলে যায়। এতে পরিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ‘গুট ব্যাকটেরিয়া’র বিন্যাস এবং কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয় এবং এর ফলে প্রকৃতপক্ষে ‘গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা’ বেড়ে যেতে পারে। গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়েও এর সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন বলেও দাবি করেছেন ইসরায়েলি বিজ্ঞানীরা।

ইঁদুরের পাশাপাশি সীমিত আকারে মানুষের ওপরও এ বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নয় এমন ৩৮১ জন ব্যক্তির স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে এই বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বেশি মাত্রায় কৃত্রিম চিনি খাওয়ার সঙ্গে ‘গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা’র উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রথমে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য-তথ্য গ্রহণ করা হয়।

এরপর নির্বাচিত সাতজন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে সাত দিন ধরে সরাসরি কৃত্রিম চিনির পরীক্ষা চালানো হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় কৃত্রিম চিনি খান না এমন ব্যক্তিদেরই এই পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নির্ধারিত কৃত্রিম চিনি গ্রহণের সর্বোচ্চ মাত্রায় লাগাতার সাত দিন নানা ধরনের খাবার খাওয়ানো হয় এই স্বেচ্ছাসেবকদের। পাঁচ থেকে সাত দিনেই তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ‘গুট ব্যাকটেরিয়ার’ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অর্থাৎ ইঁদুরের মতোই কাছাকাছি প্রতিক্রিয়া হয় মানব শরীরেও।