• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি


প্রকাশিত: ১:২১ পিএম, ১৩ আগস্ট ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৪ বার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :  কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জেলার kkkচিলমারীর সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৮ সোন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রাজারজাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ারচরে বাঁধ ভেঙ্গে এক মহিলা শিশুসহ নিখোঁজ হয়েছে।

বন্যার পানি রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের ওপর উঠে রংপুর-কুড়িগ্রাম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আর কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থল বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির তীব্র  স্রোতে সদরের আরডিআরএস বাজারে ৩০ মিটার ও ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়কমন্ডলে ১৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকার মানুষজন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি উঠায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০ ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকায় কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়া যেকোন মুহুর্তে জেলা শহরের সাথে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার গ্রামীণ হাট-বাজারগুলো। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকার নছিয়ত আলী (৭০) জানান, শুক্রবার রাত থেকে ধরলার পানি প্রবল বেগে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। বাড়িতে থাকতে না পেরে ছেলে-মেয়ে, গরু ছাগলসহ মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছি। সে মাদ্রাসার মাঠও তলিয়ে গেছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে মনে হয় এখানেও আর থাকা যাবে না।একই এলাকার মঞ্জুরী বেগম জানান, বাড়িতে এক বুক পানি। সকাল থেকে চৌকি উচু করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে ছিলাম। এখন আর থাকা যায়না এজন্য নৌকায় করে ছেলে-মেয়ে ছাগল ভেড়া নিয়ে বাপের বাড়িতে যাচ্ছি।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াৎ মোঃ রহমতুল্ল্যা জানান, নাগেশ্বরী পৌরসভার একাংশসহ ১০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহম্মদ ফেরদৌস খান জানান, শুক্রবার থেকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণকে পানিবন্দি মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। যেখানে যা প্রয়োজন তা দেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, জেলায় ২৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তুলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, জেলায় ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। অপরদিকে, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোরকমন্ডল বেরি বাঁধের প্রায় ২০ ফুট অংশ ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও বেরি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমি নিজে ওই বেরি বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করার অবস্থা পরিদর্শন করে এসেছি। এ পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১৫/২০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে, পানির  স্রোতে বাঁধের আরও অংশ ভেঙে যেতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে বাঁধ ভেঙে বাড়ি ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ওই গ্রামগুলোর লোকজন আতঙ্কে শিশু সন্তান ও গৃহ পালিত পশু সহ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

বন্যার পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে কয়েকটি মৎস্য ঘেরের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কয়েক‘শ হেক্টর জমির ফসল। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও জানান, গোটা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রেখেছি যাতে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়াও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তাসহ অন্যান্য ১৩টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।