কুমিল্লার জঙ্গিরা ভাগালপুর-মিলেছে গ্রেনেডসহ৫ কেজি ওজনের বোমা
কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার জঙ্গিরা ভাগালপুর হতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেখানে মিলেছে, গ্রেনেড ও ৫ কেজি ওজনের বোমা। ওই আস্তানাটিতে কোনো জঙ্গিকে না পেলেও শনিবার দুপুরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বিস্ফোরক উদ্ধারের পর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার কথা জানান।তিনি বলেন, “ছয়টি গ্রেনেড, দুটি সুইসাইড ভেস্ট, দুটি ৫ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেছে। সব নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।”
কোটবাড়ীর দক্ষিণ বাগমারা বড় কবরস্থানের পাশের তিন তলা ওই বাড়ি থেকে আড়াই বছর আগেও একজনকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করেছিল বলে স্থানীয়রা জানায়। দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বাড়িটি দুদিন আগে ঘিরে ফেলা হলেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে অভিযান শুরু করা হয়নি।
ভোটের পর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সোয়াট ও পুলিশ সদস্যরা শুরু করেন চূড়ান্ত অভিযান, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’।
সন্ধ্যায় অভিযানের বিরতি টানা হয়। শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ফের অভিযান শুরুর কথা জানান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, বাড়িটিতে থাকা বিস্ফোরক উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে। অভিযান শুরুর পর ওই এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।শুক্রবার রাতে গ্যাস ফিরলেও পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সকাল পর্যন্তও ছিল না বলে জানান স্থানীয় দোকানি মাহবুবুর রহমান।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম আগের দিন জানিয়েছিলেন, যে জঙ্গির জন্য তারা অভিযান শুরু করেছিলেন, তাকে ভেতরে পাওয়া যায়নি। তবে বোমা ও বিস্ফোরক রয়েছে।সম্ভাব্য জঙ্গিদের অচেতন করতে পুলিশ যে গ্যাস দিয়েছিল, তার ঝাঁঝ না কমায় অভিযান অভিযান স্থগিত করা হয়ছিল।
সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কুমিল্লার ওই বাড়িতে বিস্ফোরক থাকার তথ্য পায় পুলিশ। তারপর শুরু হয় অভিযান।
একই সময়ে মৌলভীবাজারে দুটি জঙ্গি আস্তানায়ও অভিযান শুরু হয়। তার একটিতে অভিযান বৃহস্পতিবার শেষ হয়, আরেকটিতে শেষ হয় শনিবার দুপুরে। দুটি আস্তানায় মোট ১০ জনের লাশ পাওয়া যায়।
কোটবাড়ীর এই আস্তানায় দুই জঙ্গির থাকার তথ্য পুলিশ পেয়েছিল।তাদের একজনের সাংগঠনিক নাম আনাস বা আনিস। বাড়ি নোয়াখালী এলাকায়। বয়স ১৯ থেকে ২০ বছর। তিনি গত চার-পাঁচ মাস ধরে পরিবার থেকে নিখোঁজ। আরেকজনের সাংগঠনিক নাম রনি। পাঁচ মাস আগে ‘পুরনো জেএমবিতে’ যোগ দেওয়া এই ব্যক্তির বয়স ২২-২৩ বছর। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায়।
ডিআইজি শফিকুল ইসলাম শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন ওই বাড়ির তিন কক্ষের একটি ফ্যাটের একটি কক্ষে ওই দুই জঙ্গি থাকতেন। বাড়ির মালিক দেলোয়ার পুলিশকে জানান, বুধবার সকাল ১০টায় তিনি যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখনও ওই বাসায় একজন ‘ঘুমন্ত অবস্থায়’ ছিল। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলে। এই ফাঁকে সেই ‘জঙ্গি’ বাইরে গিয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে জঙ্গিরা ‘নিজস্ব কৌশল’ ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুলের ধারণা।
তাদের একজন যখন বাইরে যায় তখন সে হয়ত কাট-আপ টাইম দিয়ে যায়। সে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে না ফিরলে অন্যজনের বাসায় থাকা নিরাপদ হবে না- এরকম। আমরা মনে করছি, যে ছেলেটা আগে চলে গেছে, সে খুব সম্ভব পুলিশের উপস্থিতি দেখে বাসার ভেতরে আর আসেনি। সে যখন ফিরল না, তখন যে ঘুমে ছিল সে ওই কৌশল অনুযায়ী সরে গেছে।
কোটবাড়ী এলাকায় এই আস্তানা গড়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করে শফিকুল বলেন ,তারা মিরসরাই-সীতাকুণ্ড এলাকায় থাকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ওখানে বাসা ভাড়া পায়নি। তখন তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়- তোমরা কুমিল্লা এলাকায় চলে যাও, ওখানে ভার্সিটির যে এলাকা আছে, তার আশেপাশে অনেকগুলো ছাত্রদের মেস আছে, মেসগুলার কোনো একটাতে তোমরা আশ্রয় নাও।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ মো. আবিদ হোসেন জানান, জননিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণ বাগমারার ওই এলাকায় দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পুরো এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোটবাড়ী থেকে বার্ড পর্যন্ত সড়কে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল।