‘কুফা’ ছাগলে মতিউর চক্র!
দখলদার সাদিক এ্যাগ্রো ভেঙ্গেছে ডিএনসিসি-
লাবণ্য চৌধুরী : ‘কুফা’ ছাগলে ডুবল এবার ‘সাদিক’ এ্যাগ্রো। এর আগে ডুবেছে ছাগলকান্ডের নায়ক দুর্নীতি পরায়নে বড় বড় বুলি আওড়ানো এনবিআরের মতিউর রহমান চক্র। তাহলে কি ওই ছাগলে কুফা লেগেছে এমন প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। ‘কুফা’ সাধারনত কোনো কোনো খারাপ সময় কে আমরা বাংলাদেশীরা ‘কুফা’ বলে থাকি। জনশ্রুতি আছে ‘অপয়া’, ‘দুর্ভাগা’, ‘অশুভ’, ‘দুর্ভাগ্য’, ‘আছর’ ইত্যাদি অর্থে ‘কুফা’ শব্দটি আমরা নিশ্চয়ই শুনি, বুঝি ও ব্যবহার করি।
২২ এপ্রিল ২০১০ সালে “ ‘কুফা’মুক্ত উপনির্বাচন নিয়ে আশাবাদ” শীর্ষক নিবন্ধে [http://archive.prothom-alo.com/detail/news/58078] এবিএম মূসা লিখেছিলেন “বাংলা একাডেমী ও সংসদ অভিধানে ‘কুফা’ শব্দটি খুঁজে পেলাম না। শনির গ্রহের প্রভাব অথবা তুঙ্গে বৃহস্পতি প্রভৃতি শব্দ শিক্ষিত মহলে এবং যাঁরা জ্যোতির্বিদ্যায় বিশ্বাসী, তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কাজে ব্যর্থতা ও সাফল্যের অজুহাতে ব্যবহার করেন। তবে অশিক্ষিত মহলে কুফা লেগেছে বা জিনের আছর, নজর লেগেছে কথাগুলো বহুল প্রচলিত। কিন্তু আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশন কুফা লাগার দোহাই দিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পেছানোর কথা বললেন কেন?” যাহোক- ছাগলকান্ডে ডিএনসিসির নজরে ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’চুরমার হয়েছে দখলদারির কারণে।
ছাগলকান্ডে এনবিআরের মতিউর স্বপরিবারে ধরা পড়ার এবার ডুবল ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’। এটি সরকারি খাল দখর করে স্থাপন করা হয়েছিল। ছাগলকান্ডে মতিউরের চারদিক তছনছ হবার উপক্রমের পর ডিএনসিসির নজরে পরে ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম এর অবৈধ দখল বাণিজ্যের। ফলে যা হবার তাই হয়েছে; ডিএনসিসি ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে অবৈধভাবে সরকারি জায়দা দখল করে গড়ে তোলা ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’। ছাগলকান্ডের এসব ঘটনার পর্যায়ে তাই বলাবলি হচ্ছে ‘কুফা’ ছাগলে ডুবল এবার সাদিক এ্যাগ্রো ফার্ম। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে আসলে আমরা অনেক দিন ধরেই অবৈধ খাল দখলকারীদের নোটিশ দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু দখলকারী আমাদের কথা শুনছিল না। ফলে উচ্ছেদ করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’-এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। অভিযানের একপর্যায়ে খামারের আবাসিক কয়েকজন কর্মচারী বাধা দেন। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড অবৈধভাবে খাল ও সড়কের জায়গা দখল করেছে। এ ছাড়া ওই অংশে রিকশার গ্যারেজ ও বস্তিঘরের মতো বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোই উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সাদিক অ্যাগ্রো মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্র খালের জায়গায় করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় ছাগল–কাণ্ডের আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিসহ অন্যান্য গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়া হয়। এই ‘উচ্চবংশীয়’ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন এনবিআরের সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত।
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে এই ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ছাগলটি ফিরিয়ে দেন ইফাত। গত বছরও ঈদুল আজহার সময় তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছয়টি পশু কিনেছিলেন। সাদিক অ্যাগ্রোর স্থাপনা ভারী যন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। এসব স্থাপনা অবৈধ বলেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেন। সাদিক অ্যাগ্রোর স্থাপনা ভারী যন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। এসব স্থাপনা অবৈধ বলেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। উচ্ছেদ সম্পর্কে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সড়কসংলগ্ন সাতমসজিদ আবাসিক এলাকায় খামারটির অবস্থান। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে খাল ভরাট করে বসানো বস্তিঘরের বাসিন্দারা ছাউনির টিন ও বাঁশ-কাঠ খুলে ফেলতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর ওই স্থানে সিটি করপোরেশনের ভারী যন্ত্র আনা হয়। কিছুক্ষণ পর আসেন সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম, ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা। পরে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু হয়।
শুরুতে খামারের পশ্চিম অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। এর নিচে সাদিক অ্যাগ্রোর কার্যালয় ছিল। আর ওপরে টিনের ছাউনির একটি কক্ষে খামারের কর্মচারীদের থাকার কক্ষ ছিল। স্থাপনাটি ভাঙার কাজ চলাকালে দোতলার কক্ষে দুজন অবস্থান নিয়ে উচ্ছেদে বাধা দেন। পরে পুলিশ সদস্যদের সাহায্যে তাঁদের সেখান থেকে সরানো হয়। পরে ওই অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় একই সঙ্গে পেছনের দিকে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভাঙার কাজ শুরু করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। বস্তিঘর ও রিকশার গ্যারেজের টিনগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়ার কারণে শুধু বাঁশের কাঠামোগুলো ছিল। সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়।
উচ্ছেদ অভিযান চালানো ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানো হচ্ছে না। খালের জায়গা যে বা যারা দখল করে রেখেছে, তাদের উচ্ছেদে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়কে সাদিক এগ্রোর আরেকটি খামারও উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। বেলা সোয়া দুইটার দিকে খামারটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করা হয়। খামারের পাশে থাকা অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাও ভাঙছে সিটি করপোরেশন।