কুচক্রিদের বিষদাঁত একে একে ভেঙে দিচ্ছি-ভেঙে দেব: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্থনৈতিক উন্নতিকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিষদাঁত একে একে ভেঙে দিচ্ছি, ভেঙে দেব। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়া জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।আজ সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে চায়, অর্থনৈতিক উন্নতিকে ধ্বংস করতে চায়, দেশকে আবার গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করতে চায়—তাদের ষড়যন্ত্র চলছে, চলবে। এই ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমরা এগিয়ে যাব। কারণ আমি বিশ্বাস করি, তারা আগামীতে এই ষড়যন্ত্র করে কিছুই করতে পারবে না। তাদের সেই বিষদাঁত একে একে ভেঙে দিচ্ছি, ভেঙে দেব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাব।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তাঁর নাম ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুক্ষণ টিভিতে দেখলাম, খালেদা জিয়া শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে গেছেন। যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, যারা রাজাকারবাহিনীর প্রধান, আলবদর বাহিনীর প্রধান… এসব বাহিনী গড়ে তুলে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর।
তাদের গাড়িতে আমার লাখো শহীদের রক্তরঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছে। সেই খুনিদের বাঁচানো জন্য তিনটি মাস আন্দোলনের নামে শত শত মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মারলেন। তিনি যান বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে! এটা জাতির সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন সেটাই হলো প্রশ্ন। কোন নাটক করতে তিনি গিয়েছিলেন?’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উনি মনে করেন মানুষ কিছুই বোঝে না। মানুষ সব বোঝে। আবার দেখি অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাঁর সঙ্গে যান। তাঁদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত, কোথায় তাঁরা যাচ্ছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন? তাঁরাই বা কেমন মুক্তিযোদ্ধা! অপরাধীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তাদের সঙ্গে গিয়ে হাজির হন কীভাবে? কোন মুখে? এঁদের নিজেদের যদি একটু লজ্জা-শরম, ঘৃণা-পিত্তা থাকত, তাহলে বোধ হয় এভাবে যেতে পারতেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব অবাক লাগে, যখন কেউ ফোন করে মানবাধিকারের কথা বলেন। আমি শুধু প্রশ্ন করি, কার মানবাধিকার? খুনিদের মানবাধিকার? তাহলে আমরা যারা ভিকটিম আমাদের বিচার পাওয়ার অধিকার নাই? খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। নানা ধরনের চাপ, বাধা। শত বাধা উপেক্ষা করে আমরা রায়গুলো কার্যকর করতে পারছি। এ জন্য আমি বাংলার জনগণ ও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ মানেই ভিক্ষা, সাহায্য পেয়ে চলতে হবে—যারা দিত তারাও আমাদের পেয়ে বসেছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে জোর করা এবং জোর করে ভিক্ষা খাওয়ানো—এ রকম একটা অবস্থা। আমরা ক্ষমতায় এসেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কারও কাছে মাথা নত করব না, এটাই হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
ধার করে ঘি খাওয়ার চেয়ে, নিজের শক্তিতে নুন ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার।’ তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত একবার নিলে সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু নিজের বিশ্বাস, যে আমি সঠিকভাবে আছি কি না। একেকটা বিচার হচ্ছে আর বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। যে লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, সেই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানকে অনেকে, অনেকভাবে উপস্থাপন করতে চায়। তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা, তিনি মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত। হ্যাঁ ঠিক আছে তিনি খেতাবপ্রাপ্ত। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের ক্ষমতায় বসাতেন না।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আখতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।