কিউবার মহানায়ককে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ভালবাসায় বিদায়
অান্তজার্তিক ডেস্ক রিপোর্টার : কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে শেষ বিদায় জানাতে তার জন্মস্থান সান্তিয়াগোতে জমায়েত হয়েছেন লাখো মানুষ। কিউবাসহ বিভিন্ন দেশের নেতা ও আবেগাপ্লুত জনতা অংশ নিয়েছেন এই বিদায় অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিদেলের ভাই এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো।
নয়দিনের শোক শেষে ৪ ডিসেম্বর ওই যাত্রার ইতি টানা হচ্ছে সান্তিয়াগোর সান্তা ইফিজেনিয়া সমাধিস্থলে। এখানেই সমাহিত করা হবে ফিদেলকে। যেখানে শায়িত আছেন কিউবার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হোসে মার্তিসহ কিউবা বিপ্লবের বহু কাণ্ডারি।
গত ২৫ নভেম্বর রাত ১০টা ২৯ মিনিটে মারা যান ফিদেল কাস্ত্রো। এর ঘণ্টাখানেক পর রাউল কাস্ত্রো আনুষ্ঠানিকভাবে ওই বিপ্লবীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে নয় দিনের শোক পালনের ঘোষণা দেয় কিউবার সরকার। সেই সময়েই কাস্ত্রোর দেহভস্ম পুরো দেশজুড়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ফিদেলের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাকে দাহ করা হয়।
এর আগে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানী হাভানা এবং পূর্বাঞ্চলীয় সান্তিয়াগো শহরে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়।শোক পালনের সময়ে দেশব্যাপী মদ্য বিক্রয় বন্ধ থাকে, জাতীয় পতাকা থাকে অর্ধনমিত, আর সকল কনসার্ট ও উৎসব উদযাপন থাকে বন্ধ।
জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজধানী হাভানার হোসে মার্তি মেমোরিয়ালে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর তার ভস্ম রাখা হয়। ২৯ তারিখ বিকালে হাভানায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিন থেকে শুরু হয় কাস্ত্রোর দেহভস্মের দেশব্যাপী যাত্রা। ১৯৫৯ সালে কিউবা বিপ্লবের সময় যে পথে দেশব্যাপী যাত্রা করেছিলেন কাস্ত্রো, সে পথেই যায় এবারের যাত্রা।
ফিদেলকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে কিউবা
নয়দিনের শোক শেষে ৪ ডিসেম্বর ওই যাত্রার ইতি টানা হচ্ছে সান্তিয়াগোর সান্তা ইফিজেনিয়া সমাধিস্থলে। এখানেই সমাহিত করা হবে ফিদেলকে। যেখানে শায়িত আছেন কিউবার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হোসে মার্তিসহ কিউবা বিপ্লবের বহু কাণ্ডারি।
ফিদেলের শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা দিয়েগো মারাদোনা।
রাউল কাস্ত্রো জানিয়েছেন, ফিদেল কাস্ত্রোর ইচ্ছা অনুযায়ী, তার নামে কোনও মন্যুমেন্ট বা সড়কের নামকরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে নিষেধাজ্হা আরোপ করা হবে। ফিদেল কাস্ত্রো সবসময় ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে ছিলেন বলেও তিনি জানান।এর আগে ফিদেল কাস্ত্রোর দেহভস্ম তার জন্মস্থান সান্তিয়াগোতে পৌঁছানোর পর সমবেত বিপুল সংখ্যক মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফিদেল চিরজীবী হোন’ স্লোগান দিতে থাকেন।
ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে কিউবার মাটিতে সূচিত হয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সামরিক শাসক জেনারেল বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরের পাঁচ দশক কিউবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কিউবাকে ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেন ফিদেল। যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের অবকাশ যাপনের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে থাকা দেশটিকে রূপান্তর করেন সমৃদ্ধ ভূমিতে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ‘একনায়ক’ হলেও ফিদেল সারাবিশ্বে সমাজতন্ত্রের পথের সংগ্রামীদের কাছে তিনি বীর বিপ্লবী। কিউবার অধিকাংশ মানুষ দেশকে দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নায়ক হিসেবে দেখেন ফিদেলকে।
উল্লেখ্য, ইতিহাসে একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ফিদেল কাস্ত্রোর ভূমিকা কী, তা নিয়ে বিভক্তি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। অর্ধশতাব্দী কিউবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে তিনি সমালোচকদের চোখে একনায়ক। তবে বেশিরভাগ কিউবাবাসীর কাছে তিনি মহানায়ক। যিনি জাদুর কাঠিতে বদলে দিয়েছিলেন দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশকে।