• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

কাল সাপ-ছয় যুদ্ধাপরাধী স্বজনরা ছোবল মারতে উদ্যত-কড়া নজরে


প্রকাশিত: ৬:০৩ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৪ বার

 

এস রহমান : কাল সাপ সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে এটাই স্বাভাবিক, আর এজন্য ওদের কড়া নজরে রাখা হচ্ছে বলে 66জানিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতণ কর্মকর্তারা।এই নজরদারির কবলে রয়েছে ছয় যুদ্ধাপরাধীর স্বজন ও তাদের ছেলে মেয়েরা।নজরে থাকা সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী স্বজনদের কাউকে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় দায়ে গ্রেফতার করা’ও হতে পারে।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, কড়া নজরদারির মধ্যে রয়েছে মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, গোলম আজম, মীর কাসেম আলী ও সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী’র পরিবার ও তাদের স্বজনরা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা যেকোনও সময়ে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র করে সরকার ও দেশের ক্ষতি সাধন করতে পারেন।এ ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সরকার আগে থেকেই নজরদারি jjকরছে এসব যুদ্ধাপরাধিদের স্বজনদের ওপর।

জানা গেছে, পরিবারগুলোর সদস্যদের অতীত ও বর্তমান সব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এদের কে কোথায় লেখাপড়া করেছেন। কোথায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের কার কোথায় অবস্থান। তাদের যোগাযোগ কার সঙ্গে এবং বিদেশি কোন কোন দেশে যাতায়াত বেশী ও কী কাজে বিদেশ যাতায়াত করেন। এসব খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

এসব পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু কারা এসবেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।জানাগেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আজমের পরিবারের সদস্যরা সরকারের সবচেয়ে বেশীর ঝুঁকির কারণ। এদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসি হলেও গোলাম আযম সাজা খাটা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, মীর কাসেম আলীর পরিবার যথেষ্ট সম্পদশালী। অর্থ-বিত্ত দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে যেকোনও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে পারে এ পরিবারটি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারের ও পাকিস্তানপন্থী, ফলে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করতে পারে এই পরিবার, এমন আশঙ্কা রয়েছে সরকারের ভেতরে।

আর গোলাম আযমের সন্তান একটি বিশেষ বাহিনীতে বড় কর্মকর্তা ছিলেন। তাই তার ‘নেটওয়ার্ক’ রয়েছে মনে করে এ পরিবারটিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা’য় রয়েছে সরকারের গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এ পরিবারগুলোর কিছু প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেও জানান সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তবে এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, এসব পরিবারের সদস্যরা বসে নেই। থাকবেন না। সুযোগ পেলেই তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের যেকোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন। তাই তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্যও সরকারের হাতে রয়েছে জানান নীতি-নির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সদস্যদের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে। কারণ, সরকার মনে করে, তারা সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে।ওরা তো কাল সাপ। ওদের কিছু ষড়যন্ত্রের নমুনা ইতোমধ্যে সরকারের নজরে এসেছে।তিনি মনে করেন, শত্রু সবসময় শত্রু।

ওদিকে সালাহউদ্দিন কাদেরের পরিবার তার রায়ের আগে একটি ষড়যন্ত্র সংগঠিত করতে চেয়েছে। সরকার সতর্ক থাকায় সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতেপারেনি। তেমনি মীর কাসেম আলীও প্রচুর অর্থের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগ করে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ান, কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তা সফল হতে দেননি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, এমন কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নজরদারি রাখাটাই স্বাভাবিক। তারা তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এখনও পাচ্ছেন,এটা তো মিথ্যা নয়। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সন্তানদের দলের নেতা বানিয়েছে। এতে তো সব পরিষ্কার হয়ে যায়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতিমধ্যে নিজেই স্বীকার করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সদস্যরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেসব কারণে নজরবন্দী যুদ্ধাপরাধির স্বজনরা=
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছয় ছেলে। বড় সন্তান আব্দুল্লাহ হিল মামুন আল আযমী, দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন, তৃতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী, চতুর্থ ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় অবসরে যান। পঞ্চম ছেলে আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী, ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী।

মীর কাসেম আলীর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের অর্থ যোগানদাতাদের শীর্ষনেতা ছিলেন মীর কাসেম আলী। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে মোহাম্মদ বিন কাসেম (সালমান), তিনি পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছেন। আরেক ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান), তিনি লন্ডনে বার এট ল’ সম্পন্ন করেছেন। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা মাস্টার্স করেছেন হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে। অপর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া, আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন।

সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরী সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী। ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী। মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী। দুই বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরী ও হাসিনা কাদের চৌধুরী। ফাইয়াজের স্ত্রী দানিয়া খন্দকার, মেয়ের জামাই জাফর খান এবং সাকার ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।