• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কাল মার্ক্সের অবৈধ সন্তান.. গৃহপরিচারিকা হেলেনের গর্ভে


প্রকাশিত: ৮:৪৫ এএম, ৮ নভেম্বর ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯৭ বার

kal-helen-www.jatirkhantha.com.bd-------3সুস্নাত চৌধুরী:   শ্রেণি-সংগ্রামের তত্ত্বকথায় যিনি প্রবাদপুরুষ, তিনি বাড়ির পরিচারিকার কাছ থেকে ‘ফায়দা’ নেবেন, চরম শত্তুরেও তা মানতে চাইবে না। কিন্তু ইতিহাসের বড় একটা অংশ বলছে, ঘটনা কতকটা তা-ই।

সময়টা ১৮৫০। মার্ক্সের স্ত্রী জেনি ফন ওয়েস্টফালেনের গর্ভে তখন চতুর্থ সন্তান। স্বামীর কাজের জন্য পয়সা জোগাড় করতে ক’দিনের জন্য তিনি ঘরের বাইরে। ঠিক তখনই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন মার্ক্সের বাড়ির পরিচারিকা হেলেন ডেমুথ। মার্ক্সের কুকীর্তি ধামাচাপা দিতে, কমরেডের মুখরক্ষায়, সর্বোপরি তাঁর সংসারটি টিকিয়ে রাখতে অগত্যা সেই নিষ্পাপ অবৈধ সন্তানের ছদ্মপিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মার্ক্সের চিরবিশ্বস্ত ‘জেনারেল’— ফ্রেডরিক এঙ্গেলস! ব্যাচেলর এঙ্গেলসের সুনাম ধার করেই তার নামকরণ হল: ফ্রেডরিক লিউইস ডেমুথ। ‘আউট অব সাইট’ রাখতে জন্মের পরই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল মা হেলেন ডেমুথের থেকে দূরে, পালক পিতা-মাতার কাছে। সাময়িক ভাবে বিস্মৃতির অতলে ‘আউট অব মাইন্ড’ হয়ে রইল ‘ফ্রেডি’। জীবনকালে মার্ক্সকে আর এই কেচ্ছার খোঁচা খেতে হয়নি।marks-www.jatirkhantha.com.bd

কিশোরীবেলা থেকেই হেলেন ডেমুথ ছিলেন জেনির বাপের বাড়ির পরিচারিকা। তাঁর চিরসাথী। মার্ক্স-জেনি বিবাহের পর তাঁদের সংসারের দেখভাল করতে হেলেনকে পাঠান মার্ক্সের শাশুড়ি। মার্ক্স ও জেনির মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন হেলেন। সকলেরই অতি কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁকে কেউ ডাকতেন ‘লেনচেন’, কেউ ডাকতেন ‘নিম’। ১৮৮৩ সালে মার্ক্সের মৃত্যুর পর এঙ্গেলসের গৃহ-পরিচর্যার দায়িত্ব নেন হেলেন। ১৮৯০ সালে ক্যান্সারে তাঁর মৃত্যু হয়। মার্ক্স পরিবারের এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি, তাঁকে লন্ডনের হাইগেট-এ মার্ক্স পরিবারের সঙ্গেই সমাহিত করা হয়।

কিন্তু হেলেন কি মার্ক্স বা এঙ্গেলসের পরিচারিকামাত্রই ছিলেন? হেলেনের মৃত্যুর পর এঙ্গেলস বিবৃতি দিয়ে তাঁর কাণ্ডজ্ঞান, চরিত্রের ঋজুতা, অন্যের জন্য অন্তহীন ভাবনা ও বিশ্বস্ততার তারিফ করছেন। এ-ও বলেছেন, শুধু ঘরোয়া অনুষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতি বিষয়ক লেখাগুলির ক্ষেত্রেও মার্ক্স বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতেন হেলেনের মতামতকে। তা হলে কি পাশে থাকা এক মহিলার তুমুল বুদ্ধিবৃত্তিই মার্ক্সকে অবৈধ সম্পর্কের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল?
kal marks-www.jatirkhantha.com.bd
এই তত্ত্ব মানতে নারাজ ‘লভ অ্যান্ড ক্যাপিটাল: কার্ল অ্যান্ড জেনি মার্ক্স অ্যান্ড দ্য বার্থ অব আ রেভোলিউশন’-এর লেখক মেরি গ্যাব্রিয়েল। মার্ক্সের এ জীবনীতে তিনি খোলাখুলি লিখেছেন এই অবৈধ সম্পর্কের কথা। কিন্তু বছর কয়েক আগের এক সাক্ষাৎকারে গ্যাব্রিয়েল বলছেন, মার্ক্স-হেলেন শারীরিক মিলন কেন হয়েছিল, কী ভাবে হয়েছিল, তা আজও রহস্য। হয়তো তা কোনও ধারাবাহিক লম্বা সম্পর্ক ছিল না, ক্ষণিকের দুর্বলতার জেরে ঘটে থাকবে।

মার্ক্সই যে ফ্রেডরিক ডেমুথের জন্মদাতা, এ কথা অবশ্য সংশয়াতীত ভাবে মেনে নিতে চান না অনেক ঐতিহাসিক। কারণ, পাথুরে প্রমাণের অভাব। তবে, মার্ক্সের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট মেয়ে ইলেয়ানর যে লেনচেন-পুত্র ফ্রেডির সন্ধান পেয়েছিলেন, তাঁকে পরিবারের সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন, তাঁর প্রতি অতীতের বঞ্চনার কারণে অনুতপ্তও হয়েছিলেন, তা প্রমাণিত। এমনকী, ফ্রেডিকে যে তিনি সৎভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছিলেন, স্মৃতি খুঁড়ে সেই দাবি করেছেন জার্মান মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ক্লারা জেটকিং। আর কথা যখন কাহিনিতে এসে মিশেছে, তখন ঠিক-ভুলে মেশা মানুষের মতোই রঙিন হয়ে উঠেছেন দেবপ্রতিম কার্ল মার্ক্স। সে লাল যতটা সংগ্রামের, ততটাই সংরাগের। লেখক অগাস্ট ফ্রান্জা তাঁর ‘অ্যারোজ অব লংগিং’ বইয়ে গানে-নাটকে দেখিয়েছেন হেলেন-মার্ক্স একান্ত সম্পর্ক। হেলেনের প্রস্তাবমত এক পারস্পরিক দীর্ঘ র‌্যাপিড ফায়ারের শেষে আবেগঘন মার্ক্স বলছেন, ‘নাউ ইট’স টাইম টু প্লে মাই গেম।’ তার পর, নাট্যকারের নির্দেশ… ‘শি স্টপস রেজিস্টিং। দে ফল ইনটু ইচ আদার্স আর্মস, অ্যাজ লাইট্স স্লোওলি ডিম। ব্ল্যাক আউট।’