কালিহাতীতে পরকীয়া প্রেমিকার পলায়নের পর-ছেলের সামনে মাকে ধর্ষন-লংকাকান্ড
জেলা প্রতিনিধি.টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ছেলের সামনে মাকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।শুক্রবার বিকালে কালিহাতি উপজেলা সদরে এই সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- উপজেলার সালেঙ্কা গ্রামের শামীম (৩২), সাতুটিয়া গ্রামের ফারুক (৩৫) ও কুষ্টিয়া গ্রামের শ্যামল দাস (১৫)।
রাবার বুলেট ও লাঠিপেটার আঘাতে তাদের মৃত্যু হয় বলে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মাহফিজা ইয়াসমিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিকালে সংঘর্ষের পর ফারুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং শামীম টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় শ্যামলকে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান।
এলাকাবাসী বলছে, কালিহাতী উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম ওরফে রোমা নামের এক ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে পাশের ঘাটাইল উপজেলার শ্রমজীবী এক তরুণের (১৭) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোমার স্ত্রী পরে ওই তরুণের সঙ্গে পালিয়ে যান।
এর জের ধরে গত মঙ্গলবার সকালে রোমা ও তার পরিবারের লোকজন আলোচনার কথা বলে ওই তরুণ ও তার মাকে বাড়িতে ডেকে আনে।সেখানে রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজ তাদের মারধর করে বলে ওই তরুণের অভিযোগ।পরে এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে তাদের উদ্ধার করে।ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই তরুণ সাংবাদিকদের বলেন, রোমা তাকে ও তার মাকে ‘বিবস্ত্র করে পেটায়’ এবং পরে ঘরে নিয়ে তার মাকে ‘ধর্ষণ করে’।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার রোমা, হাফিজসহ তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে কালিহাতী থানায় মামলা করেন ওই তরুণের মা।তিনি ও তার ছেলে ধর্ষণের কথা বললেও মামলায় শ্লীলতাহানির কথা বলা হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক আবুল বাশার জানান। ঘটনার দিনই রোমা ও পরদিন হাফিজকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।
ধর্ষকের বিচার দাবিতে বিকাল ৪টার দিকে কালিহাতী উপজেলা সদরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বিজিবি ও র্যাব পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি।রাবার বুলেটে আহত কালিহাতী সদরের সমীর পাল (২৫), হরিপুর গ্রামের ইউসুফ সাইদ (২৮), রুবেল (৩০), লিটন সূত্রধর (২৫), গারোবাজারের শামসুল হককে (২৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।এছাড়া ইটের আঘাতে আহত টাঙ্গাইল সদরের মগড়া গ্রামের অঞ্জলি পালকে (৪০) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।