কালিয়াকৈরে চরম শ্রমিক অসন্তোষ-বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুর প্রতিনিধি : ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কালিয়াকৈর থানার ওসিসহ ১০ পুলিশ সদস্য ও অর্ধশত শ্রমিক আহত হন। পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ রেখে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে থাকা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের কারণে আটকে চরম দুর্ভোগ পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কালিয়াকৈর থানার ওসিসহ ১০ পুলিশ সদস্য ও অর্ধশত শ্রমিক আহত হন। পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসী, শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টানা চতুর্থ দিনের মতো এদনি সকালে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন বেশকিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। প্রথমে উপজেলার মৌচাক এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে মৌচাক থেকে চন্দ্রা এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে যেসব শিল্প-কারখানা রয়েছে, সেসব শিল্প-কারখানার মধ্যেও বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন।
এর মধ্যে যে সব কারখানা খোলা রয়েছে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সে সব কারখানায় হামলা চালান। হামলা চালিয়ে সে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বের করে মহাসড়কে নামান বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এভাবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে সকাল থেকে দুপুরে সফিপুর ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান করেন।খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা মহাসড়কে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর চালান। উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় দুপুরের দিকে মহাসড়কে একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসব কারণে সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করলে বেলা ২টার দিকে ধীরে ধীরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।তবে এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খানসহ ১০ পুলিশ সদস্য ও অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান জানান, খবর পেয়ে ওই গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও ততক্ষণে ওই গাড়িটি আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ আগে শ্রমিকদের যে ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা করেছিল। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং পরিবার নিয়ে এখানে ভাড়া থেকে চলা তাদের জন্য খুবই কষ্টস্বাধ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই ২৩ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন।তারা জানান, যতদিন এই দাবি আদায় না হচ্ছে, ততদিন এ আন্দোলন চলবে। পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিতাই সরকার জানান, সকালে মৌচাক এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান করে শ্রমিকরা। এরপর শ্রমিকরা সফিপুর ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান করে। তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে মহাসড়কে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকরা মহাসড়কে থাকা একটি গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগেও কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, শ্রমিকদের বোঝাতে গেলে তারা মারমুখি হয়ে ওঠে। আমিসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।গত ২৩ অক্টোবর থেকে উপজেলার মৌচাক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ শ্রমিক আন্দোলন হয়।