কার পাপে খুন হলো এমপি লিটন?
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : নতুন বছরের করুণ ট্রাজেডি- কার পাপে খুন হলো এমপি লিটন? কারা সেই হেলমেট পরিহিত খুনী? কেনই বা তারা খুন করলো এমপি লিটনকে? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গণ জুড়ে। যদিও প্রধানমন্ত্রী খুনীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ নিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন মারা গেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে।
গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘এমপি লিটনের বুকে এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে গুলি লাগে। এতেই তার মৃত্যু হয়।’
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিউর রহমান জাতিরকন্ঠকে জানান, দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে এমপি লিটনের বাড়িতে এসে গুলি করে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
সংসদ সদস্য লিটনের কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার অনিল সাহা ও শ্যালক আবু নাসের মিরান জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন তার দুইতলা বাড়ির নিচ তলার বৈঠক খানায় বসে ৫-৬ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় তিন যুবক হ্যালমেট পরা অবস্থায় একটি মোটর সাইকেলে তার বাসার সামনে আসে।
তাদের একজন বাসার বাইরে আঙিনায় স্টার্ট দেওয়া মোটর সাইকেলে বসে অবস্থান করছিল। অপর দুইজন এমপি লিটনের সাথে জরুরি কথা বলার অজুহাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে আকস্মিক কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। লিটন মাটিতে লুটিয়ে পড়েই অচেতন হয়ে যান। এসময় দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়।
লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই বদিউল কারিমিন বাদল জানান, দুর্বৃত্তদের ঘরে প্রবেশ এবং গুলি করার সময় এমপি লিটনের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক খুরশিদ জাহান স্মৃতি রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিলেন। গুলির আওয়াজ শুনে তিনি ছুটে এসে স্বামীকে মাটিতে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকারে আশেপাশের মানুষ ছুটে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা এমপিকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। দুটি গুলি তার বুকের দু’পাশে এবং অপরটি উঁরুতে বিদ্ধ হয়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির শব্দ শুনে বাড়ির এবং আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা মোটর সাইকেল নিয়ে তিনজন যুবককে পালাতে দেখেন; কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ সামনে যেতে সাহস করেনি। তারা দ্রুত রাস্তায় উঠে বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক ধরে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ওই সময় অন্ধকার থাকায় কাউকে চেনা যায়নি। এছাড়া এমপির বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে পালানোর সময় পর্যন্ত হামলাকারীরা মাথা থেকে হ্যালমেটও খোলেনি।
এদিকে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে সুন্দরগঞ্জ ও বামনডাঙ্গায়। তাকে হত্যার প্রতিবাদে রাতে সেখানে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা বামনডাঙ্গায় জামায়াত সমর্থক এক ব্যক্তির দুটি ওষুধের দোকানে আগুন দিয়েছে।