কার পাপে কেন ঘায়েল হলো বিএনপি-
শফিক রহমান: ২০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া গুলশানে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আন্দোলন নয়, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারকে ঘায়েল করতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাব আগের অবস্থানের বড় পরিবর্তন দৃশ্যমান হলেও
ততদিনে বদলে গেছে অনেক কিছু। প্রত্যক্ষদর্শীজন বলাবলি করছেন, বর্তমান অবস্থাদৃশ্যে বিএনপিই ঘায়েল হয়ে গেছে?
এমনকি ৫ জানুয়ারী সামনে রেখে বিএনপি কেন রাজনীতি থেকে বোল্ড আউট হলো তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সংসদ নির্বাচনের দুই বছরের মাথায় এসে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, বিএনপির ওই নির্বাচন বর্জন করা ঠিক হয়নি। নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি এখন যে দুর্দশায় পড়েছে, পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।
সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন সে উপলব্ধিকে আরও শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা নাম প্রকাশ না করে জাতিরকন্ঠকে এসব কথা বলেন। বিরাগভাজন হওয়ার শংকায় তাঁরা কিন্তু প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি নন। কারণ, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অনড় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এই অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কথা বলার ঝুঁকি নেননি কেউ। কারণ, তাতে ‘সরকারের দালাল’ আখ্যা পাওয়ারও আশঙ্কা ছিল।বিএনপির নেতারা বলছেন, পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল তাঁরা পাননি। দলীয় প্রার্থীদের ‘জোরজবরদস্তি’ হারিয়ে দিয়ে ফল ছিনতাই করা হয়েছে।
কিন্তু এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বছর পর দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন অবস্থা থেকে মাঠে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা প্রায় এক মাস ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের লুকিয়ে থাকার মনোভাব কেটে আস্থার ভাব তৈরি করেছে।
দলীয় নেতাদের অনেকেই এখন মনে করছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া বিএনপির ভুল ছিল। ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হলো, বিএনপি যদি নির্বাচনে যেত, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সে সময় নৈতিক ও মানসিকভাবে দুর্বল ছিলেন।
বিএনপি যদি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে রাখত, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠ দখলে রাখা হয়তো দুরূহ হতো। নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া হলেও কিছু আসন বিএনপির থাকত। অন্তত প্রধান বিরোধী দল থাকত বিএনপি। এতে রাজপথের পাশাপাশি সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় কথা বলার সুযোগ থাকত। কূটনীতিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হতো না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। আমার মনে হয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সংগ্রামটা নির্বাচনে অংশ নিয়েও হতে পারত।’ ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হলেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।
এভাবে মামলা-হামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের মতো নেতা-কর্মীদের পালিয়ে বেড়াতে হতো না। নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন সঠিক ছিল। কারণ আমরা সরকারের মনোভাব সম্পর্কে অবহিত ছিলাম।’
তিনি বলেন, তখন অনেকের মনে সংশয় থাকলেও উপজেলা, তিন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে আওয়ামী লীগ সরকার ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
জোটের এক নেতা বলেন, তখন মাঠের পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগে বিপক্ষে। কেবল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ মাঠে ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতো।
বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা জাতিরকন্ঠকে বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বদনাম আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করা গেছে, এটাই এখন বিএনপির বড় পাওয়া।
যদিও তাঁরা অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, চাপে রাখা গেলে ’৯৬তে বিএনপির মতো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করবে আওয়ামী লীগ সরকারও। কিন্তু সে ভুল করেননি শেখ হাসিনা সরকার। ফলে ঘায়েল হয়েছেন খালেদা জিয়া এবং বিএনপি জোট।