• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কার্ড জালিয়াত স্বপ্ন’র কেরানী কোটিপতি


প্রকাশিত: ৭:৪২ পিএম, ২৫ এপ্রিল ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৯ বার

 

 

card jaliati-www.jatirkhantha.com.bd-2এস রহমান  : কার্ড জালিয়াতি করে শপিং মল স্বপ্ন’র কেরানী এখন কোটিপতি। বহুল আলোচিত এই ক্রিমিনালের নাম শরিফুল ইসলাম (৩৩)। গোয়েন্দা অভিযান চালিয়ে তাকে পাকরাও করতে সক্ষম হয় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম, এডিশনাল পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, এডিশনাল পুলিশ সুপার রায়হান, সিনিয়র এএসপি শারমিন জাহানের নেতৃত্বাধীন চৌকস সিআইডি পুলিশ কর্মীরা।

সিআইডি জানায়, সম্প্রতি ৫টি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার মূল হোতা কয়েক হাজার ক্লোন কার্ড এবং বিপুল পরিমান কার্ড তৈরির সামগ্রিসহ অর্গানাইজড ক্রাইম টিম সদস্যরা শরিফুলকে গ্রেফতার করে।এ ঘটনায় ৯/৮/২০১৭ সালে মিরপুর থানার মামলা দায়ের করে সিআইডি তদন্তে নামে। মামলা নং-১৬। তারিখঃ ৯/৮/২০১৭ ধারাঃ ৪২০/৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১ পেনালকোড।

জানা গেছে,  মার্চ ২০১৮ এর  দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত ৫টি card jaliati-www.jatirkhantha.com.bd( ব্রাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া)  ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি ঘটনাটি অর্গানাইজড ক্রাইম, সিআইডি এর নজরে আসে। অর্গানাইজড ক্রাইম এর একটি টিম ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায় যে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন বিভিন্ন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরে যান, তখন এই চক্রটি সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরী করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে।

পরে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি চৌকষ দল অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক শরিফুল ইসলাম(৩৩)কে গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা যায়, প্রতারক  শরিফুল ইসলাম (৩৩) স্বপ্নের বনানী  শাখায় কাজ করার সময়, নিজের হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ডের অভ্যন্তরীন তথ্যাবলি নিয়ে নিতো। তারপর গ্রাহক যখন পিন নাম্বার দিতো তখন কৌশলে  পিন নাম্বার দেখে নিয়ে বিল পরিশোধের পর আবার গ্রাহকের প্রস্থানের পর রি-প্রিন্ট দিয়ে কপিটা সংগ্রহ করে তার পিছনে পিন নাম্বারটি লিখে রাখতো।

তারপর সে তার বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যাবলি ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানিয়ে কোনো একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতো। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় সে জন্য ধূর্ত এই প্রতারক পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতো।

স্বপ্নতে চাকরি করলেও তার মূল পেশা ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। এই জালিয়াতি মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় সে বিলাশবহুল জীবন যাপন করতো। সে ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য টয়োটা এলিয়ন মডেলে গাড়ি ব্যবহার করে এবং তার ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি  টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।
card jaliati-www.jatirkhantha.com.bd.1
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারক  শরিফুল ইসলাম (৩৩) পিতা মোঃ ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাস গ্রাম: হেমায়েতপুর থানা: গাঙনী  জেলা – মেহেরপুর, হাট বোয়ালীয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ২০০১ সালে এসএসসি এবং গাঙনী ডিগ্রী কলেজ হতে ২০০৩  সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে  মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রী নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচ এর কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শিখে আসে। দেশে আসার পরপরই সে কার্ড জালিয়াতি শুরু করে। ২০১৩ সালে এই সংক্রান্তে দুইটি মামলা হয় এবং সেই মামলায় প্রতারক শরিফুল ১৮ মাসের হাজতবাস করে। এরপর সে কিছুদিন স্টুডেন্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলে, সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শিখা কৌশল আবারো কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এই জালিয়াতের কাছ  থেকে জব্দ করা হয়েছে, ১.  একটি ল্যাপটপ,২. ক্লোন কার্ড ১৪০০টি,৩. একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, ৪. তিনটি পজ্ মেশিন, ৫. সচল ডিজিটাল হাতঘরি (গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত),৬. দুটি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, ৭. পাসপোর্ট ১৪টি, ৮. মোবাইল ফোন সেট (৮টি), ৯. ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড একটি, ১০. একটি পরচুলা ও একটি কালো রংয়ের সানগ্লাস ও ৩ টি এনআইডি কার্ড।