ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্তমান বাংলাদেশ সফরটি নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সফরের প্রথম দিনে গতকাল বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তবে ঐতিহাসিক এ সফরে কাঁটার মতো যে বিষয়টি বিঁধছে, তা হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া, যা তিন বছর আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল।
এ সফরের মধ্য দিয়ে প্রায় সাত দশকের সীমান্ত বিরোধ ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চুক্তিটি সে দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন নিজ দলের বিরোধিতা উপেক্ষা করে। সে জন্য তিনি সাধুবাদ পেতে পারেন। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি সইয়ের পরপরই বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এটি অনুমোদন করেছিল।
দ্বিতীয়ত, মোদির এ সফরের সময় কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা কিংবা ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি সরাসরি বাস চলাচল উদ্বোধন দুই দেশের মানুষের জন্যই উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন
কিংবা ভারতকে বাংলাদেশের বন্দর ও নৌপথ ব্যবহার সুবিধা দিয়ে আমরা তখনই লাভবান হব, যখন এর উপযুক্ত মাশুল আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে দুই দেশের সীমানা এখন চিহ্নিত হওয়ার পর নিরাপত্তা জোরদার হলো এবং জনজীবন আরও স্থিতিশীল হবে। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে কোনো ধরনের সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না বলেই বাংলাদেশের মানুষ আশা করেন।
মোদির সফর নিয়ে আমাদের চিরাচরিত বৈরী রাজনীতিতে যে বিরল মতৈক্য লক্ষ করা গেছে, তা উপেক্ষণীয় নয়। জাতীয় সব ইস্যুতেই যদি আমরা এ ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম, তাহলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যেমন ত্বরান্বিত হতো, তেমনি অনেক রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানও পাওয়া যেত।
তবে ঐতিহাসিক এ সফরে কাঁটার মতো যে বিষয়টি বিঁধছে, তা হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া, যা তিন বছর আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। এ ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ আশা করা নিশ্চয়ই অন্যায় হবে না। কোনো সমস্যা জিইয়ে রেখে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়া যায় না, সেই সত্যটি তাদের উপলব্ধি করতে হবে।