কমলাপুরে সোনার বাংলা নিয়ে মাতামাতি-উচ্ছাস
সাইফুল বারী মাসুম : কমলাপুর রেলস্টেশনে শুক্রবারের সকালটা অন্য রকম। কাউন্টারের দীর্ঘ লাইন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অপেক্ষারতদের চায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিটি।এদিন দেয়া হচ্ছে আগামী ৩ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট। এই টিকিট পেতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে লাইনে অপেক্ষা করায় সবার চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
ক্লান্তি ছাপিয়েও সকালে আগতদের নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ ঘিরে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। এক নং প্লাটফর্মে রাখা সুসজ্জিত ট্রেনটি ঘিরে মেতে উঠছেন অনেকে।যুবক-যুবতীরা ‘সোনার বাংলা’র সঙ্গে সেলফি তুলছেন। শিশু, বৃদ্ধ থেকে সব বয়সী মানুষ ঘুরে ঘুরে দেখছেন ট্রেনটি।
‘সোনার বাংলা’র ঐতিহাসিক যাত্রার জন্য প্রস্তুতির যেন কোনো কমতি নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। পুরো ট্রেন ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সকাল থেকে অর্ধশতাধিক রেল কর্মচারী এই কাজে ব্যস্ত।ধোঁয়া-মোছা ছাড়াও বগিতে বগিতে সাঁটানো হচ্ছে লালের আভায় লেখা ‘সোনার বাংলা’ স্টিকার। বেলা গড়ানোর সঙ্গে উৎসুক জনতার ভিওড় বাড়ছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনটি চলাচলের উপযোগী করে এক নং প্লাটফর্মে রাখা হয়েছে। এই ট্রেনের আসন ৭৪৬টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৪২০টি, এসি চেয়ার ২২০টি, কেবিন স্লিপার ৬৬টি এবং ট্রেনের দু’পাশে দুটি গার্ড বগি সংলগ্ন ৪০টি আসন রয়েছে।
আগামীকাল শনিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী নতুন এই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এজন্য ২৫ জুন কমলাপুর থেকে ৪ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট দেয়া বন্ধ রাখা হবে। সেটি দেয়া হবে ২৬ জুন।
এদিকে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ৩০ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আগের দু’দিনের চেয়ে আজকে ভিড় চোখে পড়ার মতো। অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন।
টিকিট না পেয়ে আগতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সব টিকিট যদি ‘কোটা প্রথা’র নামে রাখা হয়, তাহলে আমাদের ডেকে আনার মানে কি?।অবশ্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাইনে থাকলেও সবাইকে টিকিট দেয়া সম্ভব হবে না।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আন্তঃনগর ট্রেনের ১৮ হাজার আসনের বিপরীতে প্রত্যেক দিন মানুষ আসছেন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার।
তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ট্রেন ও বগি বাড়ানোয় এই অবস্থার কিছুটা সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
এছাড়া কমলাপুরে নারীদের কাউন্টার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। নারীরা জানিয়েছেন, অগ্রিম টিকিট দিতে ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে তাদের জন্য মাত্র একটি কাউন্টার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আবার এখান থেকেই দেয়া হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের টিকিটও।
কেন এমন করা হচ্ছে, তার যৌক্তিক কারণ জানতে চেয়ে ক্ষুব্ধ নারীরা বলছেন,’কি আশ্চর্য! নারী কাউন্টার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আকর্ষণীয় ‘সুবর্ণা এক্সপ্রেস’ ও ‘তূর্ণা নিশীতা এক্সপ্রেস’র টিকিট দেয়া হচ্ছে না। রেলওয়ে কি মনে করছেন- নারীদের এই ট্রেনে ভ্রমণের যোগ্যতা নেই?’গৃহকর্মী রহিমা বেগমকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পুরুষদের লাইনে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদপুরের বিলকিস আক্তার। প্রতিবেদককে পেয়ে নিজের দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি।
সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে বিলকিস আক্তার জানান, লাইনে আমার সামনে প্রায় দেড়শ’জন। টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি। মধ্যরাতে হঠাৎ করেই পরিকল্পিতভাবে একদল উচ্ছৃংখল যুবক এসে গণ্ডগোল লাগিয়ে লাইন ভেঙে দেয়। এরপর তারাই লাইনের সামনে অবস্থান নেয়। এখনও আছি, জানি না টিকিট পাব কি না?
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কমলাপুরে টিকিট নিয়ে নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। আমি ঠিক জানি না, এই বৈষম্য সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন কি না?যাত্রীদের এসব অভিযোগ নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকিট পাচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কোনো কোনো রুটের অগ্রিম টিকিট এখনও অবিক্রিত রয়ে গেছে। তবে অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনের কেবিন, এসি চেয়ার ও শোভন চেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে।টিকিট সীমিত হওয়ায় অনেকেই পাচ্ছেন না। তারাই বাইরে গিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি কেরন সিতাংশু চক্রবর্তী।