ওয়াসায় চেয়ারম্যান এমডি মুখোমুখি-টক শো’র পর চেয়ারম্যানের নামে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি : সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। সেখানে তিনি সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলেন। টক শোতে চেয়ারম্যান বলেন, ওয়াসা বোর্ড কার্যত অকার্যকর। তাকসিম তাঁর অনুপস্থিতিতে বোর্ডের সভা হতে দেন না।
বোর্ডের চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ১১ মে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি সংগঠনের নামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা সূত্র বলছে, চিঠিতে যাঁরা সই করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ তাকসিমের ‘সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। কেউ আবার চাপে পড়ে চিঠিতে সই করেছেন।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার কাজে যাঁদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তাঁরাই অভিযোগ করাচ্ছেন। আমার বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো স্বার্থহানি হয়নি। ফলে ওয়াসার কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন না। তাঁরা চাপের মুখে অভিযোগ করেছেন।যে তিনটি সংগঠনের নামে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ), ঢাকা ওয়াসা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ওয়াসা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠন তিনটির বর্তমান কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যানের কিছু উদ্যোগের কারণে এমডি তাকসিম ক্ষুব্ধ। তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াসা প্রশাসনের কিছু বিষয়ে বোর্ড হস্তক্ষেপ করে। এসব কারণে হয়তো বোর্ড চেয়ারম্যানকে চাপে রাখতে তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ এমডির অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেছেন, ওয়াসা আইনে প্রবিধান তৈরির বিষয়ে বলা হলেও তা তৈরি করা হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় না, যাতে নিজ ইচ্ছামতো কাজ করা যায়। যেহেতু এটা দেখার কেউ নেই। কাজেই যা খুশি তা–ই করবে।চিঠিতে আরও বলা হয়, বোর্ড চেয়ারম্যান টক শোতে বলেছেন, ‘ওয়াসা বোর্ডকে বাইপাস করে সবকিছু করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ওয়াসা আইন অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা চলছে না।
চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্য বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে দাবি করা হয়, ঢাকা ওয়াসার যাবতীয় কার্যক্রম বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। টেলিভিশন টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য ঢাকা ওয়াসার অর্জন ও সরকারের অবদানকে হেয় করার শামিল।
২০২২ সালের অক্টোবরে তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বোর্ডের নিয়মিত সভা করতে ওয়াসা প্রশাসন অসহযোগিতা করেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। ওয়াসা প্রশাসনের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনা করতে বিশেষ জরুরি সভাও আহ্বান করেছিল বোর্ড। তবে শেষ পর্যন্ত তা–ও হয়নি। টক শোতে অংশ নিয়ে এই বিষয়টিও আলোচনা করেন বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।
মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান টক শোতে বলেছেন, ‘ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ১৩ জন সদস্য, ইনক্লুডিং তাকসিম খান। উনার ভোটাধিকার নেই, উনি উপস্থিত থাকতে পারবেন। উনি উপস্থিত না থাকলেও সভা হতে পারে, কিন্তু উনি উপস্থিত না থাকলে বা ছুটিতে থাকলে কখনোই বোর্ড সভা হতে দেন না এবং আমরা চেষ্টাও করে দেখেছি, উনি হতে দেন না। ঢাকা ওয়াসা বোর্ড কার্যত অকার্যকর।
টক শোতে বোর্ড চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে দাবি করা হয়। বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলেও চিঠিতে বলা হয়। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসায় অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিমের মোবাইল ফোনে গতকাল সন্ধ্যায় কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।