• রোববার , ৫ জানুয়ারী ২০২৫

ওয়েস্টিন রিজেন্সিতে ডিজে বেলেল্লাপনা-হিরো শাহিনের তাফালিং


প্রকাশিত: ৩:২৭ এএম, ২ জানুয়ারী ২৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : হোটেল ওয়েস্টিন ও রিজেন্সিতে ডিজে বেলেল্লাপনায় তোলপাড় চলছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইংরেজি বর্ষ বরণের রাতে (থার্টিফার্স্ট নাইট) অবৈধ মদ ও বিয়ার বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর কয়েকটি পাঁচতারকা হোটেলে অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (নারকোটিক্স)। এতে হোটেলগুলোতে আয়োজিত কথিত ডিজে পার্টিসহ পাশ্চাত্য ধাঁচের নানা অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, থার্টিফার্স্ট নাইটে বিশৃঙ্খলা রোধে সন্ধ্যার পর হোটেলের বার বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়েকটি হোটেলে ডিজে পার্টিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমনকি হল ভাড়া দিয়ে অনুমোদনহীন এলাকায় মদ-বিয়ার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়। এক পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুত বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়।

জানা যায়, রাত ১২টার দিকে গুলশানের পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুত ১৩৬ বোতল বিদেশি মদ ও ৩২৬ ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। এছাড়া বনানীর শেরাটন হোটেল থেকেও অবৈধ বিদেশি মদ-বিয়ার উদ্ধার করা হয়।

এ অভিযানের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উত্তর) শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে সন্ধ্যার পর বার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ পার্টিতে আগতদের কাছে পরিবেশনের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে মদ-বিয়ার মজুত করে। অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে জড়িতরা পালিয়ে গেছে। প্রচলিত আইনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, থার্টিফার্স্ট নাইটে ডিজে পার্টি আয়োজনের জন্য কোটি টাকায় ওয়েস্টিনের তিনটি ভেন্যু ভাড়া দেওয়া হয়। এর মধ্যে বলরুম এবং ২৩ তলায় প্রেগো নামের মদের বার ভাড়া নেন আলোচিত পার্টি আয়োজক ডিজে প্রিন্স। এছাড়া হোটেলের স্পল্যাশ নামের পুল সাইড বার এলাকা সজিব এবং হৃদয় নামের দুই অ্যারেঞ্জারের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে তারা সেখানে অবৈধ মদ ও বিয়ারের মজুত গড়ে তোলে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওয়েস্টিন হোটেলে ডিজে পার্টির ঘোষণা দিয়ে আয়োজকরা ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এতে উঠতি বয়সি থেকে শুরু করে শহুরে তরুণ-তরুণীদের অনেকে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একেকটি টিকিট ৩ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। কিন্তু হোটেলে আকস্মিক অভিযানে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। এছাড়া অভিযানের মুখে অনেকেই মুখ ঢেকে তড়িঘড়ি হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি করায় তারা হোটেল কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সূত্র জানায়, ওয়েস্টিন ছাড়াও বনানী সুপার মার্কেটে অবস্থিত শেরাটন হোটেলের কয়েকটি ভেন্যু ডিজে পার্টি আয়োজনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। ডিজে জুডো ও আতিক নামের দুই অ্যারেঞ্জার ৫০ লাখ টাকায় শেরাটনের রুফটফ ভাড়া নেয়। যথারীতি তারাও কয়েক সপ্তাহ ধরে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করে। একেকটি টিকিট ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। কিন্তু অভিযানে শেরাটনের ডিজে পার্টিও বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আগতরা টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে হইচই করে।

গুলশানের হোটেল রেনেসাঁ ও খিলক্ষেত এলাকার হোটেল রিজেন্সিতেও অভিযান চালানো হয়। এ সময় হোটেল রিজেন্সির রুফটপসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ডিজে পার্টির আয়োজনের প্রমাণ মেলে। সেখানে টিকিট কেটে শত শত তরুণ-তরুণীকে ঢুকতে দেখা যায়। পরে হোটেলের বেশ কয়েকটি গোপন জায়গা থেকে ৯১ বোতল বিদেশি মদ ও ৩৬৭ ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

সূত্র জানায়, রিজেন্সি হোটেলে অবৈধ মদ-বিয়ার বাণিজ্যের অভিযোগ পুরোনো। এর আগেও একাধিক অভিযানে রিজেন্সি থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-বিয়ারসহ নানা ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাহিন ওরফে হিরো শাহিন নামের এক অ্যারেঞ্জার দীর্ঘদিন ধরে হোটেলে ডিজে পার্টি আয়োজন করে আসছে। মাদক ব্যবসার সুবাদে ইতোমধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন শাহিন। ঢাকায় তিনি রীতিমতো অভিজাত জীবনযাপন করেন।

নারকোটিক্স কর্মকর্তারা জানান, থার্টিফার্স্ট নাইটে অবৈধ মদ-বিয়ারসহ মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে ৮টি বিশেষ দল মাঠে নামে। এছাড়া সাদা পোশাকে নারকোটিক্সের জনবল বিভিন্ন হোটেল, মদের বার ও ক্লাবের আশপাশে দায়িত্ব পালন করে। এতে অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় ইতিবাচক ফল মিলেছে। বিশেষ করে পাঁচতারকা হোটেলেও অভিযানের মধ্য দিয়ে নারকোটিক্স তার সক্ষমতার জানান দিতে চেয়েছে।

নারকোটিক্সের ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকাত ইসলাম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, পাঁচতারকা হোটেলে অভিযানের মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে একটা বার্তা দিতে চাই। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে কেউ প্রভাবশালী নয়। আইনের চোখে সবাই সমান। ফলে অনিয়ম করলে এখন থেকে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

জাবিতে ৯ শিক্ষার্থী আটক-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) থার্টিফার্স্ট নাইটে প্রক্টোরিয়াল টিমের অভিযানে ৯ শিক্ষার্থীকে মদ্যপ অবস্থায় আটকের পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ। তারা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত¡ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী হ্রুই মুইং স্যাং ও কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিপন হোসেন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাঁধন। শিপন থাকেন কামালউদ্দিন হল ও সতীর্থ আল-বেরুনী হলে থাকেন। অন্য আটকরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের প্রিয়ন্তি নাগ, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপজাতি শিক্ষার্থী থোয়াইনুপ্রু এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের খেংচেং ফু মারমা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তরা ইউনিভার্সিটির আফরিন আশা এবং প্রাইম নার্সিং কলেজের মাসুই মারমাকে আটক করা হয়। প্রিয়ন্তি ঢাবির রোকেয়া হল ও আফরিন নবীনগরে নিজ বাড়িতে থাকেন। থোয়াইনুপ্রু ঢাবির জগন্নাথ হল ও খেংচেংফ্রু মারমা রোকেয়া হলে থাকেন। আটকের পর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।