এস কে সুরের লুটের সাম্রাজ্যে দুদকের হানা
বিশেষ প্রতিনিধি : ব্যাংক লুটেরাদের গুরু দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরীর বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং দুই কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও বীমার নথি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ধানমন্ডিতে এস কে সুর চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসায় তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। ফেসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়কার ব্যাংক লুটেরাদের কাছ থেকে এস কে সুর মাসিক মাসোহারা নিয়ে তাদের অনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সামাল দিতেন। ফলে লুটপাট করেও পার পেয়ে যাচ্ছিলেন এস কে সুর চৌধুরী। কিন্তু ফেসিস্ট হাসিনার পলায়নের পর সব ভেস্কে যায়।
যাহোক, অভিযানে ওই টাকা ছাড়াও ফ্ল্যাটের দলিল, চেকবই, পাসপোর্ট ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেছে দুদক টিম। দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, দুদকের অভিযানে সেগুনবাগিচা, রামপুরা এবং ধানমন্ডিতে সুরের তিনটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি যেখানে বসবাস করতেন, সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও বিমার কাগজপত্র এবং বিপুলসংখ্যক ব্যাংক হিসাবের চেক পাওয়া গেছে।
অভিযানে রূপালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের ৩৫টি চেক বই, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স ও জীবন বীমায় ২০ লাখ টাকার বীমা, ৪০ লাখ টাকা গিফট ডিড, ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৫০ লাখ টাকার পেনশন সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় সমিতির ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়ী আমানত, প্রাইম ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার এফডিআর, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১০ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩ হাজার ৪০০ টাকার প্রাইজবন্ড, নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্রায় ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৬টি ডায়মন্ড আংটি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া, সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর ১৩টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে টিভি, এসি, ফ্যান ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তালিকা করে আনে দুদক টিম। গত ১৪ জানুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় সংস্থাটির উপপরিচালক নাজমুল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি টিম এসকে সুরকে গ্রেপ্তার করে। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর এসকে সুরকে আদালতে হাজির করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এসকে সুরের আমলনামা-
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সে সময়ে তৎকালীন গভর্নরের পদত্যাগ ও দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন আরও দুজন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তারা হলেন আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী।
এদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় এসকে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের আগস্টে এই পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
আলোচিত পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এসকে সুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ২৯ মার্চ এসকে সুরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।এসকে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান।