এসপি বাবুল আক্তারকেই মিতু হত্যার তদন্তভার দিন-মানববন্ধনে সর্বস্তরের-মানুষ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পুলিশ সুপার-এসপি বাবুল আক্তারকেই দেয়ার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ।তাদের দাবি, সাহসী এসপি বাবুল আক্তারকেই মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার দিলে প্রকৃত রহস্য দ্রুত উন্মোচিত হবে এবং খুনিরাও ধরা পড়বে।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।এদিকে মানববন্ধন পালনকালে জঙ্গি সন্দেহে মো. ইব্রাহিম (২৬) নামে এক রিকশাচালককে আটক করেছে কর্মসূচিতে অংশ নেয়া লোকজন।
আটকের পর তার রিকশার গদির নিচ থেকে দুটি ছোরা, একটি পেনড্রাইভ ও একটি দামি মোবাইল সেট উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই রিকশাচালক তার বাড়ি টাঙ্গাইল বলে জানালেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। তার পিতার নাম আবুল বশর খান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মানবন্ধনস্থল থেকে আটক যুবকের পিঠে ছিল একটি ব্যাগ। ফুল প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এই যুবক বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মানববন্ধন চলাকালে একাধিকবার রিকশা নিয়ে চক্কর দেয়।
তার বেশভুষা ও চালচলন সন্দেহজনক হওয়ায় মানববন্ধনে অংশ নেয়া লোকজন তাকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ইব্রাহিম জঙ্গি অথবা ছিনতাইকারি দলের সদস্য বলে পুলিশ ধারণা করছে। কোতোয়ালী থানার ওসি তদন্ত নুর আহম্মদ জানান, আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তদন্তভার বাবুল আক্তারকে দেয়ার দাবি
মিতু হত্যাকাণ্ডের পরপরই এ ঘটনার বিচার দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ডাক দেন চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্ম। শুক্রবার বিকালে কয়েকশ তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেয়।
এতে বক্তারা বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ হতে চললেও পুলিশ প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার বা জাতির সামনে হাজির করতে পারেনি।এর থেকে পুলিশের উপর জনগণের আস্থা যেমন কমছে তেমনি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে, সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকেই মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার দিলে প্রকৃত রহস্য দ্রুত উন্মোচিত হবে এবং খুনিরাও ধরা পড়বে। তারা অবিলম্বে এ হত্যা মামলার তদন্তভার বাবুল আক্তারকে দেয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, সামাজিক সংগঠন ময়ূরাক্ষীর তফজ্জল নিপু, আলো দেখাবোই-এর স্বপন মোল্লা, স্বপ্ন ও আগামীর মো. ইব্রাহিম, লিও মেহবুব আলী, ইসমাইল আজাদ, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিষদের এসএম ফরিদুল আলম, হৃদয়ে বায়ান্ন’র মোঃ মুবিন, হাটহাজারী কলেজের সাবেক ভিপি খোরশেদ আলম, জাহেদুল ইসলাম, পূর্বাশার আলো’র ফয়সাল বিন কাসেম, ডা. আরকে রুবেল, মো. নুরুল হুদা, পুলিশ পরিবারের পক্ষে তারেক আজিজ, শফিক সোহাগ প্রমুখ। মানববন্ধনটির উদ্যোক্তা এহসান বিন দিদার কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
আটক তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে
মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মেহেদীবাগ থেকে আটক তিনজনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার বিকালে আমিনুর রশীদ, আবদুর রাজ্জাক ও আবদুল হান্নান নামে এ তিনজনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করেছিল পিবিআই। আটকের পর তাদের ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে এমন আরেকজনও এখন পুলিশের কব্জায় আছে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে আগামী রোববার আদালতে মিতু হত্যামামলায় গ্রেফতার আবু নছর গুন্নুর রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
তাকে গ্রেফতারের পর দশ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে আদালত কোন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হলো তার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আইওকে।গুন্নু ঘটনার সময় জিইসি মোড়ে উপস্থিত ছিলেন এমন তথ্য ও মোবাইল কললিস্টের ভিত্তিতেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বলে জানায়।
একইভাবে সন্দেহজনক সেই কালো মাইক্রোবাসের চালক জানে আলমকেও জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।