এসপির স্ত্রী হত্যাকারীরা পার পাবেনা : প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এই গুপ্তহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। তাদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় মদিনা হিলটন হোটেলে মদিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
ঢাকার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে রবিবার সকালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মোটরবাইকে আগত অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসী উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোনো দোষ ছিল না। অথচ বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথে তাকেই তার বাচ্চার চোখের সামনেই খুন করা হলো। এটা খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোনো ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই এ ধরনের আর কোনো ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনও না ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা একসময় বাস, ট্রেন লঞ্চে বোমা ছুড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্ত হত্যায় নেমেছে। এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এত বিপুল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভবপর হয়নি।
এ সময় দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ একে ‘বিস্ময়কর’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধ এবং আমরা সবসময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করি। যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হলে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এবং এই সুনাম অর্জন করতে পারাটাও আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ।
সৌদি বাদশাহের সঙ্গে বৈঠকসহ সৌদি আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তাঁর লক্ষ্য থাকবে।
এ সময় জেদ্দা চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার বৈঠককেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা প্রতিরোধে তার দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথাও এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহবান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর রওজা মোবারক জিয়ারত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রাতে সৌদি রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতার মাঝে পবিত্র মদিনা নগরীর মসজিদ-ই-নববীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেছেন। তিনি মসজিদে নববীতে এশার নামাজ এবং তারাবির নামাজ আদায় করেন এবং দেশের জনগণ এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি, প্রগতি এবং উন্নয়ন কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ সফরসঙ্গীরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সৌদি আরব সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে গতকাল মদিনার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের উদ্দেশে যাত্রাকালে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে আন্তরিক বিদায় জানানো হয়। মদিনার ডেপুটি গভর্নর আবদুল মুহসিন আল মুনিফ, সৌদি আরবে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ওআইসি’র স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম মসিহ এবং মদিনার কনস্যুলার জেনারেল এ কে এম শহিদুল করিম বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান। বিমানবন্দরে সৌদি সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার জানায়।