এসএসবির সুপারিশ একপেশে-ক্ষুদ্ধ আশরাফুল-পদ বঞ্চিতদের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রী
এস রহমান : এসএসবির সুপারিশ একপেশে-ক্ষুদ্ধ মন্ত্রী ; পদ বঞ্চিতদের পক্ষে মতামত দিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী। সরকারে ভেতরে পদবঞ্চিতদের পক্ষে মন্ত্রীর এই আচরণ প্রশাসনে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই প্রথম পদোন্নতি সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ অনুমোদনের সময় কোনো মন্ত্রী এসএসবির সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে যুক্তি ও তথ্য দিয়ে নিজের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেছেন। এটি প্রশাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
পদোন্নতিবঞ্চিত ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা ছাড়াও এ বিষয়ে প্রশাসনের সাধারণ কর্মকর্তাদের অনেকে জানিয়েছেন, এই একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বহুদিন প্রশাসনের ইতিহাসে ও কর্মকর্তাদের মনের মণিকোঠায় বিশেষ স্থানজুড়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কর্মকর্তারা বলেন, মন্ত্রীর এই ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের সঙ্গে তারা আছেন এবং থাকবেন। যদি তাদের পদোন্নতি নাও হয় তবু এবার তারা হয়তো জানতে পারবেন, কাকে কী কারণে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার মনগড়া ভিত্তিহীন রিপোর্টের নামে পদোন্নতি বঞ্চনার অপসংস্কৃতিও হয়তো আর থাকবে না।
বিতর্কিত ও স্বৈরাচারী পদোন্নতি বিধিমালাও এবার সংশোধন হবে। তারা মনেপ্রাণে চান, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো একজন উজ্জ্বল ভাবমূর্তির মন্ত্রী প্রশাসনের এই ন্যায়যুদ্ধে সফল হবেন। তারা বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রীও তেমনটি চান। কেননা এর আগে কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
শুধু পদোন্নতি বঞ্চিতদের জন্য এসএসবি করার নির্দেশনাও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন। যে কারণে বর্তমান সরকারের সময়ে এ নিয়ে দু’দফায় এ ধরনের এসএসবি হয়েছে। এর আগে কোনো সরকারের সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিতদের জন্য আলাদাভাবে পদোন্নতি বিবেচনার কোনো বৈঠক হয়নি।
জানা গেছে, এবারের পদোন্নতি নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুরু থেকেই একটি বিষয় পরিষ্কার হতে চেয়েছিলেন। সেটি হল যাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে এবং যাকে দেয়া হবে না তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা উল্লেখ করতে হবে। এ ব্যাখ্যা দিতে না পারায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এ সংক্রান্ত কার্যবিবরণী পড়েছিল।
সবশেষে নানামুখী চাপে মন্ত্রী স্বাক্ষর করলেও সেখানে তিনি তার নৈতিক অবস্থান ঠিকই তুলে ধরেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সারসংক্ষেপ অনুমোদনের সময় মন্ত্রী তার মতামত তুলে ধরে লেখেন, ‘এসএসবির কার্যবিবরণী সংবলিত সারসংক্ষেপ দেখলাম।
এতে মোট ৭৩ জন কর্মকর্তাকে সরকারের যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যেসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করতে না পারার কারণ হিসেবে তার নামের বিপরীতে পদোন্নতি সংক্রান্ত বিধিমালার ৪(২)নং বিধি উল্লেখ করা হয়েছে। তা যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে হয় না। এজন্য পরবর্তীকালে এই বিধিটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কর্মকালীন দায়িত্বে গুরুত্ব ও প্রকৃতি এবং ব্যক্তিগত সুনাম সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।’
তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘প্রস্তাবিত ৭৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিতরা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন-জানেন এমন কর্মকর্তারাও বাদ পড়েছেন। আবার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারের মতাদর্শী কর্মকর্তারাও সুপারিশকৃত হননি। তাই এই প্রতিবেদনকে পদোন্নতির সুপারিশের ভিত্তি হিসেবে ভবিষ্যতে গ্রহণ করা না করা কিংবা এ সম্পর্কে বিকল্প চিন্তার অবকাশ রয়েছে।’
এছাড়া মন্ত্রী আরও লেখেন, ‘এমতাবস্থায় সুপারিশকৃত কার্যবিবরণী সম্পর্কিত সারসংক্ষেপ স্বাক্ষর করা হল। তবে নিম্নস্বাক্ষরকারী ও প্রতিমন্ত্রী বরাবরে বাদ পড়া যেসব কর্মকর্তা আবেদন করেছেন তাদের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করার জন্য যথাশিগগির এসএসবির বিশেষ সভা আহবান করে কিংবা নিয়মিত ব্যাচগুলোর পদোন্নতি প্রস্তাবের সঙ্গে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
এদিকে মন্ত্রীর এ কঠোর অবস্থানের বিষয়টি কর্মকর্তাদের অনেকে জেনে যাওয়ায় সচিবালয়জুড়ে ভিন্ন উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে। বেশির ভাগ কর্মকর্তাই মন্ত্রীর এ অবস্থানকে সাধুবাদ জানান।
একজন উপসচিব বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এমনকি গোয়েন্দা রিপোর্টেও তাকে একজন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মন্ত্রীর এমন অবস্থানকে তিনি স্যালুট করেন। পদোন্নতিবঞ্চিত অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, যে পদোন্নতি বিধিমালায় এসএসবিকে পদোন্নতি দেয়া না দেয়ার ক্ষেত্রে একেবারে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে বিধিমালা কোনোদিন প্রশাসনে অগ্রগতি বয়ে আনতে পারে না। তারা এ বিধিমালার আশু সংশোধন চান।
পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আসেন। তবে বিশেষ কারণে মন্ত্রী না থাকায় তারা ফিরে যান। সূত্র মতে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তাদের ক্ষোভ-অসন্তোষের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি মন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।জানা গেছে, পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতির দাবিতে ইতিমধ্যে আবেদন জমা দেয়া শুরু করেছেন। গতকাল প্রথমদিনে ৯ জন যুগ্মসচিব তাদের আবেদনপত্র জমা দেন।