• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

এশিয়া কাপে বোম্ব-বাস্টিং খেলবে তামিম


প্রকাশিত: ১:৫৮ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৯ বার

TAMIM-www.jatirkhantha.com.bdপ্রিয়া রহমান  :  পিসিএলের দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে এশিয়া কাপে বোম্ব-বাস্টিং খেলবেন তামিম।এমনটাই প্রত্যাশা তাঁর কাছে বাংলাদেশীদের।
দারুণ আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) শেষে  দেশে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। অনাগত সন্তানের জন্য অপেক্ষার রোমাঞ্চ নিয়ে শনিবার উড়াল দেবেন ব্যাংকক। আপাতত কদিন মাঠের বাইরে থাকলেও তামিমের সঙ্গী একটি তৃপ্তি, অবশেষে ধরতে পেরেছেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের ভাষা!

দেশের বাইরের টি-টোয়েন্টি লিগে এর আগেও বেশ কয়েকবার খেলতে গেছেন তামিম। এবারের মত তৃপ্তি নিয়ে ফেরেননি কখনোই। আইপিএলে পুনে ওয়ারিয়র্সে তো টুর্নামেন্ট জুড়ে দর্শক হয়েই থাকতে হয়েছে। খেলেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও নিউ জিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। কিন্তু প্রত্যাশার প্রতিফলন পারফরম্যান্সে ছিল সামান্যই। সেই তামিমই এবার দারুণ উজ্জ্বল পিএসএলে। পেশাওয়ার জালমির হয়ে ৬ ম্যাচে ৩ অধর্শতকে রান করেছেন ২৬৭, গড় ৬৬.৭৫।
তামিম জানালেন, এবার প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পেরে তিনি দারুণ খুশি।

“বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে কোনো দল যখন আমাকে নেয়, তাদের প্রত্যাশাও বেশি থাকে। এর আগে কোনোবারই সেভাবে ভালো করতে পারিনি। এবার পেরে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজে রান পেয়েছি, দলও জিতেছে। এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।”

৬ রাউন্ড শেষে পিএসএলে সবচেয়ে বেশি রান ছিল তামিমেরই। সপ্তম ম্যাচে খেলতে পারেননি কুঁচকির চোটে। প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে খেলা হয়নি কৌশলগত কারণে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য এমনিতেই প্লে অফ পর্বে খেলতে পারতেন না তামিম। তার পরিবর্তে পেশাওয়ার যাকে খেলাবে, সেই ব্র্যাড হজকে আগে থেকেই একটু মানিয়ে নেওয়াতে চেয়েছিল দল। তাই শেষ ম্যাচেও তামিম ছিলেন বাইরে। ম্যাচ দুটি কম খেলেও সর্বোচ্চ রানের তালিকায় প্লে অফের আগে তামিম ছিলেন সেরা তিনে।

তবে শুধু নিখাদ পরিসংখ্যানে নয়, তামিম তার চেয়েও বেশি নজর কেড়েছেন ব্যাটিংয়ের ধরনে। সহজাত প্রবৃত্তি দমিয়ে রেখে পিএসএলে ইনিংসের শুরুতে বেশ সময় নিয়েছেন তামিম।

টি-টোয়েন্টিতে অনেকবারই রানের জন্য ছটফট করে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। পিএসএলে একটুও ছিল না তাড়াহুড়ো। সময় নিয়ে ইনিংস গড়েছেন, শট খেলেছেন কেবল বাজে বলেই। থিতু হওয়ার পর আবার ঠিকই খেলেছেন দারুণ সব শট।

এর আগে বিপিএলেও অনেকটা একই ঘরানার ব্যাটিং দেখা গিয়েছিল তামিমের। সফল হয়েছিলেন সেখানেও, করেছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান (৩৭.২৫ গড়ে ২৯৮)। তামিম জানালেন, অনেক ভেবে-চিন্তেই টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে এই পরিবর্তনটা এনেছেন তিনি।

“আমার টি-টোয়েন্টির রেকর্ড নিয়ে আমি একটুও সন্তুষ্ট ছিলাম না। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি এটা নিয়ে, অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। কিছুই কাজে দিচ্ছিল না। আমাদের কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গেও অনেকবার কথা বলেছি এটা নিয়ে। বিপিএলের আগে উনি বলেছিলেন, ‘অনেক কিছুই তো চেষ্টা করলে টি-টোয়েন্টিতে। এবার একটু শান্ত থেকে ধীর-স্থির ব্যাটিং করে দেখতে পারো’। আমারও মনে ধরল কোচের পরামর্শ।”

“বিপিএলে সেভাবে খেলেই রান পেলাম। এখন তো পিএসএলেও একইভাবে খেলে সফল। বিপিএলের সময়ই মাশরাফি ভাই বলেছিল, ‘অবশেষে মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে তোর খেলাটা খুঁজে পেয়েছিস।’ আমারও মনে হয়েছে, এভাবেই খেলা উচিত আমার।”

বিপিএল-পিএসএলের সাফল্যে বিশ্বাসটা মজবুত হয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও আপাতত এভাবেই ব্যাট করতে চান তামিম।

“আগে টি-টোয়েন্টিতে প্রত্যাশা মতো রান পাচ্ছিলাম না, তার চেয়ে হতাশার ছিল, নিজের ব্যাটিংটাই বুঝতে পারছিলাম না, কিভাবে খেলা উচিত। এখন আমি নিজের খেলাটা জানি। সাফল্য পাই বা না পাই, সেটি পরে। আপাতত এভাবেই ব্যাটিং করে যেতে চাই।”

পেশাওয়ার জালমিতে তামিমের কোচ ছিলেন জিম্বাবুয়ে গ্রেট, সাবেক ইংল্যান্ড কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। এক সময় র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন তামিম।

“যাওয়ার আগেই হাথুরুসিংহে আমাকে বলেছিল, অ্যান্ডির কাছ থেকে যতটা পারা যায় শিখতে। আমি গিয়ে অনেক কথা বলেছি। শিখেছিও বেশ কিছু দিক। সামনে সেসব কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।”

বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন তামিম। একই সঙ্গে ফিরেছেন বাংলাদেশের আরও দুই পিএসএল অভিযাত্রী সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। শনিবার থেকে এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের অনুশীলন শুরু হলে যোগ দেবেন সাকিব-মুশফিক। তামিম উড়ে যাবেন থাইল্যান্ডে, যেখানে আগেই রেখে এসেছেন স্ত্রী ও মাকে। তামিম-আয়েশা দম্পতির প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা সেখানেই।

প্রথমবার বাবা হওয়া নিয়েও দারুণ রোমাঞ্চিত তামিম।
“ঠিক বলে বোঝাতে পারব না, কেমন লাগছে। সব কিছু ঠিকঠাক হলে, যখন বাবা হয়ে যাব, তখনও হয়ত বোঝাতে পারব না অনুভূতি!”

জীবনের দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকার জন্যই খেলতে পারছেন না আসছে এশিয়া কাপে। একদিকে বাবা হওয়ার রোমাঞ্চ, আরেকদিকে দেশের হয়ে খেলতে না পারার হাহাকার, এই দুই অনুভূতির লড়াইটা হয়েছে প্রবল।

“অনেকের কাছে হয়ত সিদ্ধান্তটি সহজ, প্রথমবার বাবা হওয়ার কাছে তুচ্ছ সবকিছুই। কিন্তু আমার জন্য এটি ছিল অনেক বড় সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের হয়ে খেলা আমি মিস করতে চাইনি কোনোভাবেই। আমি খেলতে চাইলে স্ত্রীও রাজি হতো, আমি জানি। কিন্তু অনেক ভেবে দেখলাম, এই সময়টায় অন্তত ওর পাশে থাকা উচিত।”

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৫ বা ২৬ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর আলোয় আসতে পারে খান পরিবারের নবতম সদস্য। তামিম ঠিক করে রেখেছেন, সবকিছু ভালোয় ভালোয় হলে, সন্তান জন্মের পর ২-৩ দিনের বেশি থাকবেন না। দেশে ফিরে শুরু করবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি।