এলিটার জাদুতে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিস্ময়কর জয়
স্বপ্নের ফাইনাল ম্যাচের আগের দিন মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক এমিলি বলেছিলেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।’ গতকাল ফাইনাল ম্যাচটি জিতে নিয়ে সে কথাটিরই যেন বাস্তব রূপ দিলেন এমিলিরা। অপরাজিত ইস্ট বেঙ্গলকে পরাজয়ের তিলক পরিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলেন ঘরের ছেলেরাই। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ৩৫ হাজার দর্শককে আনন্দে মাতিয়ে শিরোপা মুকুট পরল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড।
পুরো ম্যাচে ঘরের ছেলেদের দারুণভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে গ্যালারিভরা দর্শকরা। নব্বইয়ের দশকের পর ফুটবল ম্যাচে এমএ আজিজের গ্যালারিতে এত দর্শক দেখল চট্টলাবাসী। ফুটবলের পুনর্জাগরণের জন্য আয়োজকরা এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন। আয়োজকরা সার্থক। ফুটবলের জোয়ার ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তারা। সে সঙ্গে নিজেদের ঘরেই রাখতে পেরেছেন এ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের কাপটিও।
ম্যাচের ৯ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। ডানপ্রান্ত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে এলিটা ক্রস করেন। পেনাল্টি বক্সের সামনে দাঁড়ানো মিঠুন গোলমুখে হেডও করেন; কিন্তু অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে যায় কলকাতা কিংফিশার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে অভিনব গোলমুখে উড়ন্ত শট নেন। ক্লিয়ার করতে গিয়ে আবাহনীর ডিফেন্ডার মিশু হেড করেন।
তার হেড থেকে বল সাইডবারে লেগে জালে জড়িয়ে যায় ১-০। দুর্ভাগ্য স্বাগতিকদের। ডিফেন্ডারের মাথায় বলটি না লাগলে গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ দলকে বিপদমুক্ত করতে পারতেন; কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় গোলটি হজম করতে হয় আবাহনীকে। ভাগ্যের সহায়তায় প্রথম গোলটি পেলেও দ্বিতীয় গোলের নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করেও অল্পের জন্য বঞ্চিত হতে হয় কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব দলটির। ২৬ মিনিটে অবিনাশ কর্নার কিক করেন।
পেনাল্টি বক্সের কোনায় দাঁড়ানো ইস্ট বেঙ্গলের কৌশলী মিডফিল্ডার রফিক ড্রাইভ দিয়ে গোলমুখে হেড করেন। গোললাইন থেকে তা ক্লিয়ার করেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মিশু। চার মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিক করেন আবাহনীর পক্ষে এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা জাহিদ। ইস্ট বেঙ্গলের গোলরক্ষক দিবেন্দ্র সরকার কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন। ৩৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে আবারও আক্রমণে যায় আবাহনী। ডানপ্রান্ত থেকে জাহিদ মাইনাস করেন। ডি বক্সে বল পেয়ে যান মিঠুন।
গোলমুখে শট নিলেও ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। কর্নার কিকের পর পেনাল্টি বক্সের জটলায় গোলের সুযোগ হয়েছিল আবাহনীর। কিন্তু ভাগ্য যেন সহায় ছিল না তাদের। এ কারণে বারবার গোলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পরও সফলতার মুখ দেখেনি স্বাগতিকরা। অবশ্য প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়েই ম্যাচে সমতায় ফিরেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে টুর্নামেন্টের সেরা গোল করে এলিটা দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গ্যালারিভরা দর্শকদের আনন্দে মাতান ১-১। বামপ্রান্ত দিয়ে মিঠুন এগিয়ে গিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পেনাল্টি বক্সের সামনে দাঁড়ানো এলিটার উদ্দেশে হাওয়ায় ভাসানো শট দেন। উড়ে আসা বলটি হেড করে ইস্ট বেঙ্গলের জালে পাঠিয়ে দেন এলিটা কিংসলে। অফিসিয়াল হিসেবে গোলটি ৪৫ মিনিটে হয়েছে উল্লেখ করা হয়।
বিরতির পর মাঠে আরও জ্বলে ওঠেন স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা। ম্যাচের ৫৪ মিনিটেই এগিয়ে যান তারা। বামপ্রান্তে ডি বক্সের সামনে ফ্রি-কিক পায় আবাহনী। জাহিদ গোলমুখে ব্যানানা শট নেন। পেনাল্টি বক্সেও কোনায় দাঁড়ানো সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ড এলিটা জোরালো শটে বল জালে জড়ান ২-১। ৫৭ মিনিটে ম্যাচে আবারও এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। এবার এলিটা নিজে গোল না করে সতীর্থকে দিয়ে গোল করানোর দিকে মনোযোগ দেন। বামপ্রান্ত দিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়ে উড়ন্ত ক্রস দেন এলিটা। পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে চমৎকার হেডে টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান হেমন্ত ৩-১।