• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

এলাকার ধনী ব্যক্তিদের কাছে ল্যাপটপ-প্রজেক্টর চাইলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারী ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ডিজিটাল করতে এলাকার বিত্তশালীদের সাহায্য 11চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি এলাকার ধনী ব্যক্তিদের প্রত্যেককে নিজ নিজ গ্রামের স্কুলগুলোতে একটি করে ল্যাপটপ ও একটি করে প্রজেক্টর উপহার চাইলেন তিনি। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭’ ও ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করার ক্ষেত্রে আমি একটু আহ্বান করবো। আমাদের যারা সংসদ সদস্য আছেন, বিত্তশালী মানুষ প্রচুর আছেন। অনেকের এত টাকা হয়ে গেছে যে খরচ করার জায়গা পায় না। তাদের আমি অনুরোধ করবো নিজ নিজ এলাকা, গ্রামে বা স্কুলগুলোতে যদি একটি করে ল্যাপটপ ও একটি করে প্রজেক্টর উপহার দেন তাহলে অনেক সহজে আমাদের ছেলে মেয়েরা এই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম পায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য ৫টি গোষ্ঠির নিজস্ব ভাষায় লেখা ৮ ধরণের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিশুদের বই আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি ডিজিটাল শিক্ষার জন্য আমরা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই যেন নেতৃত্বটা গড়ে ওঠে সে জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আমরা স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করেছি। সেখানে তারা ভোট দিচ্ছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমরা কাব স্কাউটিং চালু করছি। আমাদের একটি শিশুও শিক্ষা বঞ্চিত থাকবে না।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ যদি বলতে থাকেন পড় পড় পড়, তাহলে পড়তে ভালো লাগে না। পড়াশুনার প্রতি জন্য তাদের আগ্রহ বাড়ে সে কাজ করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে। আমাদের শিশুরা যেন কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে দিকে মনোযোগী হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৯৮৩টি রেজিস্টারর্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করি। সেখানে কর্মরত ১ লাখ ১১ হাজার শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় যেখানে কোনও বিদ্যালয় নেই সেখানে একটি করে প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় করে দিচ্ছি। জেলায় জেলায় সরকারিভাবে অথবা বেসরকারিভাবে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার করার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়ক ট্রাস্ট ফান্ড করা হয়েছে।’

স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যাগে টিফিন তৈরি করে দিতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিস্কুটগুলো এনে দেখেছি। এ রকম সাধা-সিধে বিস্কুট দিলে কার খেতে ভালো লাগবে? বিকল্প আরেকটা ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটা পরিচ্ছন্ন কমিটি আছে, ওই এলাকায় একটা বিত্তশালী গ্রুপ আছে। আল্লাহর রহমতে আমরা চাইলে সেখানে টিফিন নিজেরা তৈরি করে বাচ্চাদের দিতে পারে।’

বিস্কুট সরবরাহকারী দেশের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কাদের কোন দেশ আমাদের বিস্কুট দেবে, সে বিস্কুট আমাদের বাচ্চারা খাবে। হাত পেতে চলবো কেন? অনেক জেলায় শুরু হয়ে গেছে। তাহলে আর কারও কাছে মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। যখন পড়তে পড়তে একটু ক্ষুধা লাগে তখন পড়ায় মন বসে না।’

তিনি বলেন, ‘ধান ‍উঠলে ধান, পাট উঠলে পাটের টাকা দিয়ে এইভাবে দিয়ে দিয়েই আমাদের দেশে প্রথম স্কুলগুলো গড়ে উঠেছিলো। সরকারিভাবে না। বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা সেকেন্ড চান্স স্কুল করে দিচ্ছি। পার্বত্য জেলা ও হাওড়-বাওড় এলাকাগুলোয় আবাসিক স্কুল যেন হয় সে ব্যবস্থা আমরা করছি।’

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই যে মহৎ পেশায় আপনারা কাজ করছে। সোনার ছেলে গড়ার কারিগর কিন্তু আপনারা। শিক্ষকদের জন্য দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা খাতে বাজেটে যে টাকা আমরা দেই এটাকে আমরা ব্যয় মনে করি না। এটাকে আমরা বিনিয়োগ মনে করি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা যুগপোযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। সে শিক্ষা নীতিতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছি। সব ধর্মের সম্পর্কে সবারই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমরা সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য। বিজ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করবে। আমাদের সর্বস্তরের শিক্ষায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার হোক। এই দেশকে আজকের শিশুরা আগামী দিনে পরিচালিত করবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে গেলে শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। আর এই শিক্ষার ভিত্তি যত মজবুত হবে, শক্ত হবে, শক্তিশালী হবে ততই শিক্ষার মান উন্নত হবে। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা এই জাতিকে গড়ে তুলতে পারবো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো।’

‘শিক্ষার আলো জ্বালবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’ প্রতিপাদ্যে শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।