• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

এমপির ত্রাসের রাজত্ব ০ গফরগাঁওয়ে বেআইনীকার্যকলাপ ০ মেয়র-সহ বহু নেতা-কর্মী এলাকাছাড়া


প্রকাশিত: ১:৩৮ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২৩ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৪ বার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন সুমন গত ছয় মাস ধরে এলাকা ছাড়া। গত ২৭ মার্চ তাঁর জন্মদিনে ফ্রান্স প্রবাসী বন্ধু ইনসাফ সুমন ভূঁইয়া ‘ভবিষ্যতে তোমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে মেয়র ধন্যবাদ জানিয়ে কমেন্ট করেন। এর পর থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন সুমনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। গত ঈদুল ফিতরের নামাজের পর মেয়রের অনুসারীদের বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনাও ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা এই হামলা জড়িত। হামলার ঘটনার পর প্রাণনাশের ভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। গত ৬ মাস ধরে এলাকায় যাচ্ছেন না মেয়র।  তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও তাঁর অনুসারীদের দাবি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মেয়রকে অনাস্থা দেওয়ায় গফরগাঁওয়ে ভয়ে আসছে না।গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, ২৭ মার্চ আমার জন্মদিন। আমার প্রিয়জনেরা আমাকে নানা ভাবে ওই সময় উইশ করেন। এবার জন্মদিনে সংসদ সদস্যের সঙ্গে সৌদি আরব অবস্থান করছিলাম।

সে সময় আমার ফ্রান্স প্রবাসী বন্ধু ইনসাফ সুমন ভূঁইয়া তাঁর ফেইসবুক পোস্টে ভবিষ্যতে ‘তোমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ এমন পোস্ট করেন। আমি পোস্টটি পুরোপুরি না দেখে তাকে ধন্যবাদ জানাই। যা আমার জীবনের জন্য কাল হয়। এ বিষয়ে এমপি সাহেবের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। কারণ তিনি আমার অভিভাবক। তাঁর পরেও আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী হবো সেটা ভেবে এমপি প্রথমে সমস্ত বাজারের ইজারা তোলা বন্ধ করে দেন। পরে আমার অফিসে তাঁর লোকজন পাঠিয়ে হুমকি দেন। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর আমার অনুসারীদের বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘরে হামলা করা হয়।  পরে প্রাণনাশের ভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হই। তারপরেও এমপির অনুসারীদের হুমকি থেমে নেই।

ওইদিন প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। এখন তারা প্যানেল মেয়র শাহজাহান সাজুকে নিয়ম না মেনে মেয়র বানিয়ে আমার রুমে বসিয়ে পৌরসভা পরিচালনা করছে। নৌকা নিয়ে মেয়র হয়ে সাড়ে সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। এমন দিন দেখতে হবে তা কখনো ভাবেনি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবগত রয়েছেন। আশা করছি তিনি একটি সুন্দর সমাধান দেবেন।   ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়রকে এলাকা ছাড়া করার পর আমাকে ফোন করে বলা হয় অনাস্থা দিতে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় আমার বাসাতে এমপির অনুসারীরা হামলা চালায়। যা সিসি টিভির ফুটেজে দৃশ্যমান। আমি এখন আমার পরিবার নিয়ে প্রাণনাশের ভয়ে ময়মনসিংহ শহরে যাযাবরের মতো জীবন যাপন করছি।

পৌর যুবলীগের সদস্য তাজমুন আহম্মেদ বলেন, আমি মেয়রের কাছের লোক হওয়ায় সংসদ সদস্যের অনুসারীরা প্রথমে আমার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর আঘাত করে। তারা আমাকে জিম্মি করে আমার ইটভাটা লিখে নেয়। প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করি। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গত ছয় মাস ধরে কয়েকশ নেতাকর্মী অন্যত্র বসবাস করছি। এরপরেও পুলিশি হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে।   স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের অনুসারী গফরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহজাহান সাজু বলেন, মেয়র নিজের দুর্নীতি ঢাকতে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের রোষানলে পরবে বলে এলাকায় আসছেন না।শাহজাহান সাজু আরও বলেন, দুই টার্ম ধরে আমি প্যানেল মেয়র। তাই সবাই আমাকে মেয়র হিসেবে জানে।

এ সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে মেয়রের সঙ্গে কোনো ধরনের মতবিরোধ হয়নি। সে মেয়রের দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে নানা অনিয়ম করে আসছে। তাই সকল কাউন্সিলরগণ তাকে অনাস্থা দিয়েছে। সেই ভয়ে সে গফরগাঁও ছাড়া। কেউ তো তাকে গফরগাঁও আসতে বারণ করেনি। কারও বাড়িতে কোনো ধরনের হামলা হলে পুলিশ অন্তত জানত। তারা আইনের সহযোগিতা নিতে পারত।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো.মোস্তাফিজার রহমান  বলেন, উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।