এবার ৩ কোটি টাকার সম্পত্তি লুটেরা পুলিশ
এস রহমান : নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে এক বৃদ্ধের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ভালুকা থানা পুলিশের তিন উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে।এদিকে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওই বৃদ্ধের কাছেই ১২ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জমি ফেরত পাওয়ার চেষ্টায় এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মোহাম্মদ আবজস আলী নামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ।ভালুকার শিল্পাঞ্চল পাড়াগাঁও মৌজায় আবজস আলীর পৈত্রিক জমি আছে। যার পরিমাণ এক একর ৫৪ শতাংশ। আবজস আলী ভালুকা উপজেলার নিচ্ছাম পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।দলিল ও আবজস আলীর আইনজীবীর ‘লিগ্যাল নোটিশ’ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা শিল্পাঞ্চলের পাড়াগাঁও মৌজার সাবেক ৯৫, বিআরএস ১৫০৫, ১৫১৯ নম্বর দাগে এক একর ৫৪ শতাংশ জমি গত ৯ ফেব্রুয়ারি ১৩৬০ নম্বর আম-মোক্তারনামা দলিল রেজিস্ট্রি হয়।
ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিলের গ্রহীতা হলেন ভালুকা মডেল থানার এসআই ফায়েজুর রহমান, রুহুল আমিন ও ফারুক হোসেন। পুলিশ কর্মকর্তারা কর্মস্থলে বসেই বৃদ্ধের কাছ থেকে জমিটি লিখে নেন। আর দলিলপত্রে পুলিশের তিন এসআই তাঁদের পেশা হিসেবে উল্লেখ করেন ‘ব্যবসা’। এ ছাড়া গ্রহীতার তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় আরো চার ব্যক্তি। অথচ আইন অনুযায়ী জমির মালিক ও তাঁর সন্তানদের অনুমতি ছাড়া ‘আমমোক্তারনামা’ করার কোনো সুযোগ নেই।
আবজস আলী জানান, স্থানীয় যাঁরা গ্রহীতার তালিকা আছেন, তাঁদের সবাই ভূমিদস্যু হিসেবে চেনে। এঁরা হলেন ভালুকার হবিরবাড়ি গ্রামের হীরা মিয়া, পাড়াগাঁও গ্রামের জজ মিয়া, হবিরবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও পাশের ত্রিশাল উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান।পরে জমির মালিক বৃদ্ধ আবজস এই দলিল ‘পণ্ডরত রহিতপত্র’ (অসম্মতি জানিয়ে নতুন দলিল বাতিল করার চেষ্টা) করতে গত ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জজ আদালতের এক আইনজীবীর মাধ্যমে গ্রহীতাদের লিগ্যাল নোটিশ দেন।
এদিকে, জমিটি ফেরত পাওয়ার আশায় আবজস আলী আদালতের আইনজীবীর মাধ্যমে ওই দলিলের রেজিস্ট্রি বাতিলের চেষ্টা করলে থানার ওসি তাকে উল্টো দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।আবজস আলী জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পণ্ডরত রহিতপত্র দলিল করতে গেলে ভালুকা মডেল থানার ওসি মামুনুর রশিদ তাঁর কাছ থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে থানার ওসি মামুনুর রশিদ বিষয়টি মীমাংসার নামে আবজসের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই টাকা জমির গ্রহীতাদের দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
ভালুকা মডেল থানাএ ব্যাপারে ভালুকা মডেল থানার এসআই ফায়েজুর রহমান মুঠোফোনে অভিযোগটি স্বীকার করে বলেন, ‘ভালুকার হবিরবাড়ি গ্রামের হীরা মিয়া, পাড়াগাঁও গ্রামের জজ মিয়া, হবিরবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও পাশের ত্রিশাল উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন লোকের দাবিতে তিনিসহ তাঁর সহকর্মীরা আবজসের জমির দলিল করে নিয়েছেন। এখানে আর কোনো সমস্যা নেই। অনুরোধ করি, অনেক লেখালেখি হইছে আমরা ঝামেলায় নেই।’
ভালুকা মডেল থানার ওসি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনাটি আবজস আলীর সৌদি আরব প্রবাসী ছেলের সঙ্গে অন্য ভাইদের পারিবারিক বিরোধের ফসল। আমি ঘটনা শুনে সত্যতা পেয়ে চার পুলিশকে বলেছি, তোমরা ভেজাল মিটমাট করো। অন্যদিকে আবজস আলীকে আমমোক্তারনামা বায়না বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতেও বলেছি। পাশাপাশি আমার অফিসারদের বলেছি আমি তোমাদের অপকর্মের দায় বহন করব না।’