এবার সুশীল সমাজের রায়-‘প্রার্থী পছন্দ নাহলে ‘না ভোট’
বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ এর মাধ্যমে দেশবাসিকে জানিয়েছেন, এবার ‘না ভোট’ চালুর ব্যাপারে সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া না ভোট চালুর পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, বড় রাজনৈতিক জোট দু’টো অনেক সময় অর্থ ও পেশিশক্তির কাছে মাথা নত করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়।
নির্বাচনকালীন সরকার কার্যত একটি তত্ত্বাবধায়ক ভূমিকা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপ শেষে জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু আর গ্রহণযোগ্য করার বিভিন্ন পরামর্শ জানতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সুশীল সমাজের সংলাপ শুরু হয় সোমবার সকালে।
ওই সংলাপের পর সাংবাদিকদের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে ধরণের রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই হোক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তাদের কোনো অবস্থায়ই প্রচলিত ও দৈনন্দিন নির্ধারিত কাজের বাইরে কিছু করার সুযোগ থাকবে না।
‘এবং সবচেয়ে বড় কথা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য ইসির হাতে যে ক্ষমতা আছে তার সর্বাঙ্গীন প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে,’ বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি আরও জানান, যারা যারা রাজনৈতিক দলের মনোভাবাপন্ন বা সম্পৃক্ত, সেই ধরণের আমলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনী কাজ থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে সংলাপে বলিষ্ঠভাবে মত দেয়া হয়েছে।
‘না ভোট’ চালুর ব্যাপারে সংলাপে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, না ভোট চালুর পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, বড় রাজনৈতিক জোট দু’টো অনেক সময় অর্থ ও পেশিশক্তির কাছে মাথা নত করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়।
‘না ভোট থাকলে তো আমরা গিয়ে বলতে পারব, তোমাদের এই মনোনয়ন আমরা পছন্দ করলাম না,’ বলেন আসিফ নজরুল।
দ্বিতীয় যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, এর আগে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এবার যেন এরকম কোনো সুযোগ না থাকে সেজন্য না ভোট দরকার। এই সুবিধাগুলো বিবেচনা করে অনেক দেশেই না ভোটের প্রচলন রয়েছে। এর আগে চালু করা না ভোটে দেশের নির্বাচনে কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে আবারও এই ভোট ব্যবস্থার সুযোগ চালু করার পরামর্শ দেন এই ঢাবি শিক্ষক।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ নির্বাচিত না হতে পারে – এ ব্যাপারে পরোক্ষভাবে সব আলোচক একমত ছিলেন বলেও জানান তিনি। সংলাপে সবাই বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।এছাড়াও সংলাপে ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছিল বলে বক্তারা জানান।
সংলাপে নির্বাচনী রোডম্যাপের ৭টি বিষয় নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিভিন্ন পরামর্শ নেয় ইসি। যে সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক না কেন, ইসির সঙ্গে হওয়া এই সংলাপই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে আশা করছেন বর্তমান আর সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কোন রোডম্যাপ কিংবা সংলাপ আযোজন না হলেও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচনী সংলাপের আয়োজন করেছিল তৎকালীন হুদা কমিশন।