• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

এবার মুজাহিদের মিশন তামান্না’য় অভিযান


প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ২৩ নভেম্বর ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৫ বার

আসমা খন্দকার:  এবার মুজাহিদের মিশন তামান্না’য় অভিযান চালাবে রাজউক।এটি রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ জাল জালিয়াতি করে নিজেকে অসহায় দেখিয়ে উত্তরায় সরকারের এই মহামূল্যবান ৫ কাঠার প্লটটি হাতিয়ে নিয়েছিলেন। রাজউকের চেয়ারম্যান এর সত্যতা স্বীকার করেছেMission-Tamanna_completed-ন।

রাজউক জানায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথিত স্বীকৃতিস্বরূপ’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) স্বর্ণতুল্য প্লট পেয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরায় বরাদ্দ পাওয়া ওই প্লটে তিনি ছয়তলা বাড়ি মিশন তামান্না তুলে বসবাস করছিলেন আরামে আয়েশে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়ার পর সেই প্লটের বরাদ্দ বাতিলের জোরালো দাবি তুলেছে স্বাধীনতাস্বপক্ষের মানুষ। এ অবস্থায় বরাদ্দ বাতিলের সুযোগ আছে কি-না যাচাই-বাছাই করে দেখছে রাজউক।

মুজাহিদের প্লট পাওয়া প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির জানান, এই বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি যারা রাষ্ট্রীয় অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন, তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। ওই সময় রাজউকের চেয়ারম্যান কে ছিলেন, কে কে তাদের ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, এই বরাদ্দ বাতিলের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অস্থাবর
সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। কারণ তারা লুটপাটের মধ্য দিয়ে আরও অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া বলেন, যে ধারায় তাকে প্লট দেওয়া হয়েছে, তাতে ধারাটির অপব্যবহার হয়েছে। কোনো ত্রুটি থাকলে বা সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেলে বাতিল করা যায়। এর আগেও বরাদ্দ দেওয়া প্লট বাতিলের নজির আছে। রাজউক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্লট বাতিল করতে পারে কি-না এসব বিষয় এখন পর্যালোচনা হচ্ছে।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ভূমি বরাদ্দ বিধিমালার ১৯৬৯ (সংশোধিত) ১৩/ক ধারা বলে মুজাহিদকে প্লটটি দেওয়া হয়েছিল। ১৩/ক ধারায় বলা আছে, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট ব্যক্তি যার রাজধানীতে থাকার জায়গা নেই, তাকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ধারায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য।’

রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, দেশের গুণী ও দেশ-জাতির জন্য বিশেষ অবদান রাখা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যক্তির বাসস্থানের জন্য এ ধারাটি রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে রাজউকের কাছে আবেদন করতে হয়। ওই আবেদনপত্র পূর্ত মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতামতের জন্য রাজউক পেশ করতে পারে বা রাজউক তার ক্ষমতাবলেও প্লট বরাদ্দ দিতে পারে।

প্লট পাওয়ার আগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ঢাকায় বসবাসের মতো তার কোনো জমি নেই। নিজস্ব আয় দিয়ে জায়গা কেনার মতো আর্থিক অবস্থাও তার নেই। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এমন আর্থিক দৈন্যের সৃষ্টি হয়েছে। মাথাগোঁজার একটু ঠাঁই নির্মাণের জন্য তাকে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হোক।ওই আবেদনের পর ১৩/ক ধারার সুযোগ নিয়ে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর রাজউকের ১৬২তম বোর্ড সভায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে রাজউকের উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। অতি দ্রুততায় ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ তাকে পাঁচ কাঠার প্লটটি বুঝিয়েও দেওয়া হয়।

জানা যায়, ওই সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল উদ্দিন বোর্ডসভায় মুজাহিদের মন্ত্রী থাকার বিষয়টি প্লট পাওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। ওই বোর্ড মিটিংয়েই প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

মিশন ডেভেলপার নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাড়িটি তৈরি করে অর্ধেক ফ্ল্যাট অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। পাঁচটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন মুজাহিদ। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই ভবনেরই তৃতীয় তলার দুটি ফ্ল্যাটে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন মুজাহিদ।