‘এবার বেরিয়ে পড়বো পুরুষাঙ্গ কর্তনে’
সাংবাদিক শারমিন শামস্: রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে মাইক্রোবাসে করে একজন গারো কর্মজীবী তরুণীকে পাঁচজনের দলবেধে ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের অপকর্মের পুনরাবৃত্তি রোধে পুরুষাঙ্গ কর্তনে বেরিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছেন সাংবাদিক শারমিন শামস্। শনিবার তার ‘এবার বেরিয়ে পড়বো পুরুষাঙ্গ কর্তনে’ এই লেথাটি অনলাইনে প্রকাশের পর লেখাটি নিয়ে বিভিন্নজন নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এতে পুরুষদের অনেকেই ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, নারীদের ঘরেও তো বাবা বা স্বামী রয়েছে। শারমিন শামসের সাহসী এ লেখাটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঝড় তুলেছে।
শারমিন শামস্ লিখেছেন, ‘গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে দেড় ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাতভর তিন তিনটে থানা ঘুরে, সর্বশেষটিতে ওসির জন্য ঘণ্টা চারেক অপেক্ষা করে, আরো তিন ঘণ্টা বসে থেকে তারপর মামলা করতে পেরেছে মেয়েটি। কনগ্র্যাচুলেশনস মেয়ে! মামলা করতে পারার জন্য অন্তত পক্ষে। পুলিশেরও ধর্ষণের ইচ্ছে জাগে। সুযোগ পেলে তারাও ধর্ষণ করে। তুমি পাঁচ পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছ থানায়, সেখানে আরো দশটি পুরুষাঙ্গওয়ালার কাছে গিয়ে বিচার চাওয়ার সুযোগ চেয়েছো। এতো সহজে তুমি পার পেয়ে যাচ্ছো ক্যামনে?’ তিনি লিখেছেন, ১৪ই এপ্রিল থেকে ২২শে মে। মাস খানেকের মধ্যে ধর্ষণ করে করে সাড়া ফেলে দিলেন আমাদের পুরুষরা।
পারফরমেন্স ভালোই! ধর্ষণ তো প্রতিনিয়তই হয়। পাটক্ষেতে, জঙ্গলে, পাকা বাড়িতে, অফিসে, হোটেলে, রান্নাঘরে, বাথরুমে, পাহাড়ে, বাগানে। কোথায় নয়? বাদ ছিল এই মাইক্রোবাস। প্রতিবেশি দেশকে দু’বেলা গালি দিয়ে আজ আমাদের বীর পুরুষরাই লুঙ্গি তুলে নেমে পড়লেন। এবার ধর্ষণ হবে বাসে, সিএনজি অটোরিক্সা, টেম্পুতে, ট্রেনে, ফেরিতে।
এই ধর্ষকদের চিনতে পেরেছে মেয়েটি। পাহাড়ের কর্মঠ সাহসী মেয়ে বলেই হয়তো সে এতটা দৃঢ়চেতা আছে এখনও।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের চেনামুখ পুলিশ কর্মকর্তারা কী বলবেন এবার? ব্যস্ত নগরী, রাজধানীর বুকে ভর সন্ধ্যায় একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে ব্যস্ত সড়ক জুড়ে ঘুরে ঘুরে এই যে ধর্ষণ করা সম্ভব, এটা তো প্রমাণ করে দিলেন আপনাদের জাতভাইরা। তো এ নিয়ে কী ভাবছেন? যাই ভাবছেন বলে দিন। টিভি ক্যামেরা রেডি আছে। রাতের বেলায় বউবাচ্চা সঙ্গে নিয়ে মুরগীর হাড় চিবাতে চিবাতে মন দিয়ে দেখবেন টিভিতে নিজের চেহারা। বউ বলবে, ‘এ্যাই, কালও কিন্তু এই একই হলুদ শার্টটা পরে ইন্টারভিউ দিয়েছো। ভালল¬াগে না ছাই! উমম!!’ আপনি মধুর হেসে প্রতিশ্রুতি দেবেন যে কাল ঠিক নীল শার্টটা পরে যাবেন অফিসে। কালও তো ধর্ষণ হবে, যৌন নিপীড়ন হবে। তো ইন্টারভিউ নেয়া তো চলছেই। আপনি এখন টিভি স্টার। তো আপনাদের ইন্টারভিউ চলতে থাকুক। আপনাদের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়ার নেই আমাদের। তদন্ত, গ্রেফতার, চার্জশিট, বিচার, শাস্তি, ফাঁসি, যাবজ্জীবন- নাহ, আর কিছুই দিতে পারেন না আপনারা। শুধু অপেক্ষায় আছি কবে হিজাব পরার, সংযমী হয়ে চলার, ‘মেয়েমানুষ মেয়ে মানুষ হয়ে’ থাকার উপদেশ আসবে আপনাদের কাছ থেকে। আমি নিশ্চিত, এই উপদেশ আসবে শিগগিরই। যাই হোক, বসে থাকবো না আর। মেয়েকে স্কুলে পাঠাবো, নিজে অফিসে যাবো, রাস্তায় চলবো, পথে ঘুরবো, দোকানে-বাজারে-বাসে-ট্রেনে পরুষাঙ্গধারীরা ধর্ষণ করতে এগোলে সঙ্গে রাখা ছুরি-কাঁচি- েব্লড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে নেবো। মেয়েকে স্কুলে পাঠাবো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে। আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। যদি জšে§ছিই এই দেশে, যেখানে নারীর প্রতি রাষ্ট্রেরও ন্যূনতম মর্যাদাবোধ, সম্মানবোধ নাই, সেখানে আর কী-ইবা করার আছে আমার? আমাদের? এবার তবে নেমে পড়ছি পুরুষাঙ্গ কর্তনে। আর কোনও বিকল্প নেই। আর হ্যাঁ, চোখ দিয়ে ধর্ষণ করবে যারা, সেই সব পুরুষকে বলছি, সাবধান হোন, খুঁচিয়ে চোখ তুলে উপড়ে নেবো এইবার!’
লেখাটির প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে তীর্থক আহসান রুবেল নামের একজন লিখেছেন, অভিজ্ঞতায় বলে, যতদিন কারো পরিবার বা ভালবাসার মানুষ আক্রান্ত হবে না, ততদিন জাগ্রত হবে না কেউ। আল¬াহ যেন প্রতিটি ধরে খবর হবার মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়, তাতে যদি প্রতিবাদ উঠে প্রতিটা স্থান থেকে। শেখ নাজমুল তারিক লিখেছেন, ‘পারিবারিক, সামাজিক , ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আজকাল অভিভাবকদের চরম উদাসীনতাই এজন্য দায়ী।’ রাশিদুল হাসান নামের অপর একজন লিখেছেন, ‘আপনার মেয়ের বাবাকে কি করবেন? অথবা আপনার ভাই, বাবা? যদি আপনার ছেলে থাকে? মৌলবাদীদের মত অন্ধ আবেগে কথা না বলে যুক্তি দিয়ে বলুন।’