এবার বেকারদের উন্নয়নে মানবসম্পদ তহবিল হচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি : মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল/ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ/ দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগ নামে নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মানবসম্পদকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ‘দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে’ অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য অর্থ বিভাগের অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়ন-সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ/ দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগ (এসএসবিএ) প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। মোহাম্মদ শফিউল আলম তহবিল গঠনের পর প্রয়োজন বিচার করে এখানে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছিল, তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। নিরাপদ ও উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনই এ তহবিলের লক্ষ্য বলেও জানানো হয়েছিল তখন।
১০০ কোটি টাকার এ তহবিলের অর্থের উৎস সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ, বৈদেশিক চাকরিতে নিয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স এবং নবায়ন ফি, ব্যক্তি ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদান এবং ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়।
তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, প্রাক-নিয়োগ ও কর্মকালীন প্রশিক্ষণ এবং নারী, সুবিধাবঞ্চিত ও বেকার জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হবে এ তহবিল। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ প্রদানকারীদের অর্থায়নের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে এ তহবিল কাজ করবে। এতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালী হবে, বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে, শিক্ষা ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের সঙ্গে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। খসড়ায় দেশি ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে।
তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে খসড়ায় আরো বলা হয়, ‘বর্তমানে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্তৃক দক্ষতা উন্নয়ন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পৃথকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে একক মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত না হওয়ায় এ কার্যক্রমগুলো যথাযথ সমন্বয় সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বেসরকারি খাত কর্তৃক গৃহীত দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পদের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
খসড়ায় বলা হয়, জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলে এটি কোম্পানি অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এর আওতায় একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে (অলাভজনক) ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ নামে নিবন্ধিত হবে।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, এ তহবিল পরিচালনার জন্য একটি পর্ষদ থাকবে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ নিয়োগ দেবে। এ পর্ষদে একজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন সরকারি সদস্য এবং পাঁচজন বেসরকারি সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। অর্থ সচিব পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত থাকবে।