প্রিয়া রহমান.ঢাকা:
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামী রোববার ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ রায় ঘোষণার এ দিন আজ বৃহস্পতিবার ধার্য করেছেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
গত ৪ মে এই মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই দিন মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখা হলো।
মীর কাসেমের পক্ষে ৪ মে আইনগত বিষয়ে যুক্তি দেন আসামিপক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমীন। যুক্তিতে তিনি বলেন, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে একাত্তরে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ তিনি একাত্তরের নভেম্বরে সেখানে ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, তিনি চট্টগ্রামের ‘বাঙালি খান’ ছিলেন। অথচ ওই সময়ে ওই নামে কেউ চট্টগ্রামে ছিল না।
আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের (সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি) অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তি উপস্থাপনের শেষ পর্যায়ে আসামিপক্ষ মীর কাসেমকে নির্দোষ দাবি করে।
পরে আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানের আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানরা এ দেশকে খান খান করে দিয়েছিলেন। সৃষ্টি হয় আরেক ‘বাঙালি খানের’ নির্মম ইতিহাস।
একাত্তরে মীর কাসেম আলীর নির্যাতনে প্রমাণিত হয়েছে তিনিই সেই ‘বাঙালি খান’। তিনি বলেন, একাত্তরে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেল ছিল নির্যাতনকেন্দ্র। সেখানে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবাই সমানভাবে অপরাধী। ওই হোটেলের নিয়ন্ত্রণকাঠামো যদি হয় চাকার মতো, তাহলে তার মূল কেন্দ্রে ছিলেন মীর কাসেম আলী। রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে। যুক্তি উপস্থাপনের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানায়।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মামলায় গত ২৩ এপ্রিল
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন।
২০১২ সালের ১৭ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কারাগারে আটক আছেন। গত বছরের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১। চলতি বছর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।
অভিযোগ অনুসারে, মীর কাসেম ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) সভাপতি হন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করলে মীর কাসেম এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।
১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এ দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি জামায়াতের শূরা সদস্য। তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান।
অভিযোগ: অভিযোগ অনুসারে, মীর কাসেম আলী একাত্তরে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনী আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তাঁর নেতৃত্বে ও রাজাকারদের সহযোগিতায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার পুরাতন টেলিগ্রাফ অফিস হিল রোডের মহামায়া ডালিম হোটেল, আছদগঞ্জে মোহাম্মদ পাঞ্জাবির ভবনের চামড়ার গুদাম, পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল প্রভৃতি জায়গায় নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
তাঁর বিরুদ্ধে গঠন করা ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে আটজনকে অপহরণ করে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বাকি ১২টি অভিযোগে ২৪ জনকে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ পর্যন্ত এসব অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ২৪ জনের নাম এসব অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।