• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

এবার এরশাদের সঙ্গে ববি হাজ্জাজের তাফালিং-নিজেকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ঘোষণা


প্রকাশিত: ১০:৩৪ পিএম, ২১ মার্চ ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৪ বার

 

 hm-ershad-bobby-hajjaj.thumbnailবিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা :

দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেকে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। তবে এরশাদ ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলের নাম ঘোষণা করেছিলেন। ‘পিতার সমতুল্য’ এরশাদের সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই অমান্য করে প্রার্থী হলেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় বাবা বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের কার্যালয় ড্যাটকো প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন ববি হাজ্জাজ। প্রার্থিতা সম্পর্কে এরশাদ জানেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি আমার পিতার সমতুল্য। তাঁকে আমি অনেক ভালোবাসি। তাঁর আদেশ-উপদেশ নিতে চেষ্টা করেছি। উনি কষ্ট পান, সেটা আমি চাই না। ওনার আশীর্বাদ আমার ওপর আছে, থাকবে।’

বেলা ১১টার দিকে ড্যাটকো কার্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ববি হাজ্জাজ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয় প্রাঙ্গণের একপাশে নেতা-কর্মীদের বসার জন্য শতাধিক চেয়ার পাতা। মাঝখানে প্রাচীর। এরপর কার্যালয়ের প্রবেশপথ। সেখানেই সাংবাদিকদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়। এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে কার্যালয়ের নিচতলায় ছায়ার মধ্যে অতিথিদের বসার জায়গা করা হয়। বসার জায়গার একপাশে একটি ডায়াস ও সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয়। অনুষ্ঠানের বাইরে ছিল নিরাপত্তা বলয়।

বেলা সাড়ে ১০টা থেকেই সাউন্ড সিস্টেমে একজন উপস্থাপক ববির এই অনুষ্ঠানকে মতবিনিময় সভা বলে ঘোষণা দেন। উপস্থাপক মতবিনিময় সভায় কে কে আসছেন তার ঘোষণা দিতে থাকেন। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে মিছিল আসতে থাকে। মিছিল থেকে ‘এরশাদ-ববি ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই,’ ‘ববি ভাই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘মেয়র মেয়র চাই, ববি হাজ্জাজকে মেয়র চাই’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়।

এরপর আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা শুরু হয়। প্রথমে বক্তৃতা দেন জাপার ভাইস চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মওলা চৌধুরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জাপার সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা। তাঁরা সবাই দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী পরিবর্তন করার জন্য আহ্বান জানান। তাঁদের বক্তব্য চলাকালে ববি অতিথিদের নিয়ে ছায়ায় বসেছিলেন। এ সময় কেউ কেউ ববি হাজ্জাজ ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার সঙ্গে ছবি তুলতে থাকেন। কেউ আগত নেতা-কর্মীদের চিৎকার সামাল দেন। অনেকেই টিভি ক্যামেরার সামনে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। ফলে এই অনুষ্ঠান কী, সেটাই বুঝতে পারছিলেন না সাংবাদিকেরা।

সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ধরনের অনুষ্ঠান করায় উসখুস করছিলেন সাংবাদিকেরা। একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ববির একান্ত সহকারী মোমিনুল আমিনকে ডেকে অনুরোধ করেন ববি যেন বক্তব্য দেন। এর পরই ববি টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দেন। এ সময় তাঁর দুই পাশে ও পেছনে জাপার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ঠেলাঠেলি করছিলেন। হাসি দিয়ে ববি তাঁদের সরে যেতে বললেও তা কেউ শুনেননি, বরং সামনের দিকে আরও ঠেলতে থাকেন। ববি হাজ্জাজের বক্তব্যের মধ্যেই দলের নেতা-কর্মীরা চিৎকার করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

একজন সাংবাদিক ববি হাজ্জাজকে প্রশ্ন করেন, ‘এটা কী ধরনের অনুষ্ঠান?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটাকে সংবাদ সম্মেলন বলতে পারেন।’ এ ধরনের সমাবেশ কি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়?-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ববি বলেন, ‘তাঁরা সবাই আমার কাছে আলাদাভাবে এসেছিলেন। আমি তাঁদের একসঙ্গে আসতে বলেছি। আমার জানা মতে, এটা নির্বাচনের আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়।’

বক্তব্যের শুরুতে ববি বলেন, ‘ঢাকাবাসীর কাছে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করছি। আমি দুটি কারণে নির্বাচনে এসেছি। প্রথমত, এটি নির্দলীয় নির্বাচন; যেখানে দলের কোনো প্রভাব নেই। দ্বিতীয়ত, আমার জন্ম ঢাকায়; তাই স্বপ্নের ঢাকাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিষয়টি নিয়ে (প্রার্থিতা) পার্টির ভেতরে কোনো কোন্দল আমি সহ্য করব না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ইনডিভিজুয়্যাল ক্যান্ডিডেট)। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলব, ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে পছন্দ হয় তাহলে আমাকে সমর্থন-সহযোগিতা করবেন।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাপার ‍নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে ‘অসুস্থ’ এরশাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর এরশাদ দলীয় নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে নিজেকে জাতীয় পার্টির মুখপাত্র দাবি করে আলোচনায় আসেন ববি হাজ্জাজ। ২০১৩ সালে জাপার রিসার্চ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইসিস উইংয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন তিনি।