শফিক আজিজি. এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশী এক রাজনীতিকের গোপন তথ্য পেতে উল্টো ফেঁসে গেছেন দুই বিএনপি কর্মী।এই দুই বিএনপি কর্মী এখন সেখানকার জেলে। এফবিআইয়ের এক সাবেক এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার কথাও তারা স্বীকার করেছেন আদালতে।
এরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর উপদেষ্ঠা সজিব ওয়াজেদ জয়কে ফাঁসাতে তাঁর সম্পর্কে গোপন নথি ফাঁস করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু বিধিবাম এরা এখন উল্টো ফেঁসে গেছেন। তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেখানকার আদালত। গ্রেফতারকৃত রাজিব আহমেদ সিজারের পিতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন ঘটনাটি স্বীকার করেছেন।তিনি জানান, বিএনপি ও তারেক জিয়ার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তার ছেলের এই অবস্থা।এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে ঢাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস জানিয়েছে,বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিজভী আহমেদ ওরফে সিজার (৩৫) ও জোহানেস থালের (৫১) গত ১৭ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালতে বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটির সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তারা দুজনেই স্বীকার করেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০১২ সালের মার্চের মধ্যে তারা এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে ঘুষ সাধেন, যিনি ওই সময় এফবিআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে দায়িত্বরত ছিলেন।
এদের মধ্যে থালের এফবিআই এজেন্ট লাস্টিকের ছোটবেলার বন্ধু। আর একটি দোকানে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে রিজভীর সঙ্গে থালেরের পরিচয়।
ঘুষের এই মামলায় রিজভী ও থালেরকে গত অগাস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। আর লাস্টিককে অন্য এক অভিযোগে আগেই গ্রেপ্তার করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের খবর।
জবানবন্দিতে রিজভী বলেন, তার বিপরীত মতাদর্শের একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গোপন নথি এবং সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য তিনি ওই ঘুষ সাধেন।
তবে ওই বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম-পরিচয় ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস প্রকাশ করেনি।
রিজভী ও থালের জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবস্থান জেনে তার এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘ক্ষতি করতেই’ ওই গোপন তথ্য চাইছিলেন তিনি। এ বিষয়ে রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গে মেইল ও টেক্সট ম্যাসেজ চালাচালি হয়। এফবিআই এজেন্ট লাস্টিক প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার ডলার এবং পরে মাসিক ভিত্তিতে ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে ‘সব তথ্য’ দিতে রাজি হন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদমাধ্যম এক্সামিনার মামলার এজাহারের যে অনুলিপি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৩ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর লাস্টিকের নির্দেশে একজন এজেন্ট তিন দফা এফবিআইয়ের ডেটাবেইজে প্রবেশ করেন এবং ওই বাংলাদেশি রাজনীতিকের বিষয়ে সন্দেহজনক কার্যক্রমের গোপন নথি সংগ্রহ করেন।
এরপর ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ডানবুরির এক শপিং মলের ফুড কোর্টে থালের ও রিজভীর বৈঠক হয়। সেখানে থালের এফবিআইয়ের ওই গোপন নথিক রিজভীর হাতে দেন এবং বিনিময়ে রিজভী দেন এক হাজার ডলার।
এরপর রিজভীকে চাপ দিয়ে কীভাবে বাড়তি টাকা আদায় করা যায়, সে বিষয়ে থালের ও লাস্টিকের মধ্যে এসএমএস আদান প্রদান হয়। একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করার বিষয়েও তারা সম্মত হন।
ওই এসএমএস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাদ দেওয়ার জন্য ঘুষ দিতেও রাজি হন রিজভী ও তার ‘সঙ্গীরা’।
২০১২ সালে জানুয়ারির শেষ দিকে লাস্টিক জানতে পারেন, রিজভী আরেকটি সূত্র থেকে গোপন তথ্য বের করার চেষ্টায় আছেন। এরপর তিনি থালের কে একটি টেক্সট ম্যাসেজ পাঠন, যাতে বলা হয়, ওই এফবিআই এজেন্ট বাংলাদেশি সেই রাজনীতিকের নম্বর পেয়েছেন এবং দ্রুত ১০ হাজার ডলার না পেলে তিনি রিজভীর গোপন তথ্য চাওয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দেবেন।
এ ঘটনায় রিজভীর পেছনে আর কে বা কারা ছিল- সে বিষয়ে কিছু এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।
আগামী বছর ২৩ জানুয়ারি রিজভী ও থালেরের বিরুদ্ধে এ মামলার শুনানি শুরু হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস জানিয়েছে। আর লাস্টিকের বিচার শুরু হবে আগামী ১৭ নভেম্বর।