‘এটা মৌলিক গণতন্ত্রের ভোট-আইয়ুব খানের আমলেও হয়েছিল’
এস এম খলিল বাবু . রংপুর : রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির
সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র শরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু বলেছেন, ‘এটা মৌলিক গণতন্ত্রের ভোট আইয়ুব খানের আমলেও হয়েছিল’ ।
এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এই মেয়রের বিরুদ্ধে।তিনি সিটি করপোরেশনের ৩০ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সঙ্গের লোকজনকে নিয়ে তিনি বুথেও প্রবেশের চেষ্টা করেন।
ভোট দিয়ে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ যে ভোট হচ্ছে, এটা মৌলিক গণতন্ত্রের ভোট। এ ধরনের ভোট আইয়ুব খানের আমলে হয়েছিল। এখানে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা ভোট দেয়। এটা দামি ভোট। তাই এতে দরদাম করেও ভোট দেওয়া যায়। তবে কেউ যদি দরদাম না করে মানুষ দেখে ভোট দেন, তাহলে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া যাবে। আর দরদাম করে ভোট দিলে এখানেই শেষ। যারা জয়ী হবেন তারাও দরদাম করবেন।’
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২ টায় রংপুর জেলা স্কুল ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু তার দলবল নিয়ে একসঙ্গে দলবেঁধে পোলিং বুথে ঢুকে পড়েন। এরপর সব কাউন্সিলর এক সঙ্গে ব্যালট পেপার দাবি করে জানান, তারা একইসঙ্গে ভোট দেবেন। এ সময় বুথে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে শুধু মেয়র ঝন্টু ব্যালট পেপার নিয়ে গোপন কক্ষে গিয়ে সিল মেরে তা ব্যালট বাক্সে জমা দেন।
কর্তব্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঝন্টুর সঙ্গের লোকদের বার বার লাইন ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান। তবে তারা লাইন না ধরেই একজন একজন করে ব্যালট পেপার নিয়ে ভোট প্রদান করেন।
এর আগে সিটি মেয়র কাউন্সিলরদের নিয়ে রংপুর জেলা স্কুল ভোট কেন্দ্রে এসে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাফিয়া খানম অ্যাডভোকেটের সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে ও তার সঙ্গে আসা কাউন্সিলরদের ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। একের পর এক ফুলের তোড়া গ্রহণ করেন মেয়র। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর মার্কার নাম উল্লেখ করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে ভোট কেন্দ্রের পুরো এলাকা।
এদিকে রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। দুপুর ১ টা পর্যন্ত ৪৫ ভাগ ভোট পড়েছে বলে সহকারী রিটানিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহতাব উদ্দিন জানান।
রংপুর জেলা পরিষদে মোট ভোটার হচ্ছে ১ হাজার ৮৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮২৯ জন এবং নারী ভোটার ২৫৭ জন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ছাফিয়া খানম এবং জাসদের (আম্বিয়া-বাদল) আব্দুস সাত্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
জেলা প্রশাসক ও রিটানিং অফিসার রাহাত আনোয়ার দুপুর ১২ টার দিকে রংপুর জেলা স্কুল ভোট কেন্দ্রে এসে সাংবাদিকদের জানান, ‘মঙ্গলবার কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। আজ (বুধবার) সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘একজনের বেশি ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। একসঙ্গে বেশি ভোটার যাতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে জাসদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সাত্তার জানান, ‘দুপুর ১ টার দিকে তিনি মিঠাপুকুর কলেজ কেন্দ্রে গেলে দেখতে পান, সেখানে মাত্র ২টি ভোট পড়েছে। অথচ সেখানে ৬৫ টি ভোট রয়েছে। এই কেন্দ্রে যেহেতু ২ টা পর্যন্ত ভোট, সে কারণে এখানে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।